কুমিল্লার মুরাদনগরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই প্রায় ১ হাজার একর কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে গেছে উপজেলার ৫০টি ইটভাটায়। প্রশাসন এসব অবৈধ মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও, কিছুতেই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না জমি থেকে মাটি কাটা। দিনে অথবা রাতে যখনই সুযোগ পাচ্ছে, তখনই ভেকু মেশিন (এস্কেভেটর) দিয়ে অবৈধ ট্রাক্টরের মাধ্যমে তিন ফসলি কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটা গুলোতে।
ইট তৈরির প্রধান উপাদান হচ্ছে মাটি। তবে উন্নত ইট তৈরির ক্ষেত্রে কৃষি জমির মাটির বিকল্প নেই। ফলে প্রতি বছর গড়ে এক একটি ইটভাটায় ৮০ লক্ষ ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় প্রায় ১০ একর কৃষি জমির মাটি। সে হিসেবে প্রতি বছর ৫০টি ইটভাটায় ৪০ কোটি ইট তৈরির চাহিদা মেটাতে ব্যবহার হয় প্রায় ৫’শ একর কৃষি জমির মাটি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২ বছর আগে উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য ফসলি জমি ছিলো। শ্রেণিভেদে প্রায় সকল জমি গুলোতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরণের ফসল চাষ হয়। বিগত দুই বছরে অধিক মাত্রায় কৃষি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি সংগ্রহ, অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন ও বাড়ি নির্মাণ সহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ১ হাজার হেক্টর কৃষি জমি এখন চাষের অযোগ্য হয়ে ডোবায় পরিণত হয়েছে। যা কৃষি অফিসের চলতি বছরের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
নবীপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, স্থায়ীভাবে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে পারে একমাত্র প্রশাসন। যেকোনো অফিসার আসার পরে প্রথম প্রথম কিছুদিন ভালোই অভিযান চালায় এবং কৃষি জমিগুলো থেকে পুরোপুরি মাটিকাটা বন্ধ থাকে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কিছু কাল যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায়। অভিযান দূরের কথা উপজেলা প্রশাসনের বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। আমরা চাই, প্রশাসনের অভিযানগুলো যেন লোক দেখানো না হয়। এটি যেন সবসময় চলমান থাকে তাহলেই বন্ধ হতে পারে অবৈধ মাটিকাটা।
ছালিয়াকান্দি এলাকার কৃষক ছন্দু মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামের আশেপাশের কোন একটি বিলের জমি এখন আর সুস্থ নাই। প্রত্যেকটা কৃষি জমি থাইক্কা বর্ষাকালে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটে, আর শীতকালে ভেকু দিয়া। আমরা কেউ বাধা দিলে মাইর ধরের শিকার হইতে হয়। যারা মাটি কাটে তারা সবাই নেতা মানুষ। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন বিচারও হয় না।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ