ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

রাস্তার দু’পাশেই অবৈধ স্ট্যান্ড চরম দুর্ভোগে

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৮ মে ২০২২ ০২:১১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

টাঙ্গাইলের বাসাইলে বাসস্ট্যান্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-উপসড়ক এবং ফুটপাত দখল করে বসেছে ছোট বড় যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে চলাচলে চরম দুর্ভোগে শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।

পথচারী,  শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতার সুযোগে সড়কের দু’পাশ দখল করে যত্রতত্র এসব স্ট্যান্ডের কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে যানজট। ফলে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। জরুরী রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আটকে পড়ে থাকে অনেক সময়। এসব স্ট্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, পথচারী, ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলের নাগরিকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তার মোড়েই গড়ে উঠেছে অনুমোদনহীন স্ট্যান্ড। এর মধ্যে জিরো পয়েন্ট, কাঁচাবাজার, রেজিস্ট্রি অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, এবং চারুবাগ মার্কেট এলাকাসহ রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যানেরর অবৈধ স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ডে এলোমেলো দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা অটোভ্যানের চাপে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে উপজেলা গেট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে পিকআপ ভ্যানের পার্কিংয়ে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পরায় মানুষ ও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। অপর রোড পারমিট ও লাইসেন্স বিহীণ অবৈধ ট্রাফেট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে চরম নিরাপত্তাহীন ও দুর্ভোগের শিকার শিক্ষার্থী, রোগী অফিসগামী কর্মকর্তা কর্মচারী ও রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ পথচারীরা। 

মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও ফলাফল শূন্য। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।

পথচারী শাকিব মিয়া বলেন, প্রধান সড়কের দুই পাশ দখল করে এভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় চলাচলের জায়গা ছোট হয়ে গেছে। আবার বালু, মাটি, ইট, কাঠসহ ভারি পন্যবাহী অবৈধ মাহেন্দ্র  ট্রাফেট্রাক্টরের বেপরোয়া গতির কারণে রাস্তায় হেঁটে চলাচল করা যায় না।

স্থানীয় প্রবণ সরকার বলেন, কোনো প্রয়োজনে বাজারে এলে দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তার দুইপাশ দখল করে অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। মাঝখান দিয়ে একটি গাড়ি ঠিকমতো যেতে পারে না। কোন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে যে কেনাকাটা করবো তারও কোন সুযোগ নেই। পৌর মেয়রসহ প্রশাসনের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশ করা না শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের দোকানের সামনে এমন ভাবে অটো রিক্সা, ভ্যান সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকে কোন লোকজন আসতে পারেনা। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যানবাহনগুলো একটু সরাতে বললেও চালকরা ঝগড়া করতে আসে। 

বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যাবসায়ী জাহিদ হাসান মজনু বলেন, ড্রাইভাররা নির্ধারিত স্ট্যান্ডে যানবাহনগুলো না রেখে দোকানের সামনে রাখায় কোন ক্রেতা আমাদের দোকানে আসতে পারেনা। ড্রাইভারদের কিছু বলতে গেলেও খারাপ আচরণ করে। বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাসস্ট্যান্ডের সিএনজি চালক ইয়াছিন আলী বলেন, নির্ধারিত স্থানে গাড়ি রাখলে আমরা যাত্রী পাইনা। তাই বাধ্য হয়ে জিরো পয়েন্টে গাড়ি রাখতে হয়।

আরেক সিএনজি চালক কামরুল মিয়া বলেন, পেটের দায়ে সিএনজি চালাই। দিনে যা রোজগার হয় তাই দিয়েই সংসার চলে। বাসাইল-পাথরকাটা রোডে সিএনজির জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্ট্যান্ডের জায়গা নেই। বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে হয়। সড়কের দু’পাশের দোকানদারদের কথাও শুনতে হয়।  প্রশাসন নির্দিষ্ট জায়গায় স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করলে আমরা সবাই রক্ষা পাবো।

বাসাইল পৌর সভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম আহমেদ জানান, নির্ধারিত স্থানে গাড়ি সিএনজি, অটো রাখার নির্দেশ দেওয়া সত্বেও চালকরা ইচ্ছে মতো যত্রতত্র স্ট্যান্ড করায় যানজট সৃষ্টি হয়। এসব গাড়ির চাপে আমার বাসার সামনে নিজের গাড়িটিও পার্কিং করে রাখতে পারি না। অতি তাড়াতাড়ি পৌরসভার পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় এ সমস্যাটি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম জানান, কয়েকটি রোডে চলচল করা অটোরিকশা, অটোভ্যান ও সিএনজির নির্ধারিত কোন স্ট্যান্ড নাই। রাস্তার দু’পাশে এসব যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখায় চলাচলের আরও অসুবিধা হয়ে যায়। বাসাইল বাসস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করে ইতোমধ্যে রাস্তা প্রশস্ত করে সিএনজি দাঁড়ানোর স্ট্যান্ড নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অনুমোদনহীন স্ট্যান্ডগুলো যে সব সড়কে রয়েছে ওই সড়কগুলো প্রশস্ত করতে পারলে যানজট নিরসন ও পথচারীদের চলাচলের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যাটা চলে আসছে। অনুমোদন ছাড়াই চলকরা কয়েকটি স্পটে তাদের যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী আনা নেওয়া করছে। এতে পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপরে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর যৌথ অভিযানও চালানো হয়েছে। যানজটমুক্ত পরিচ্ছন্ন বাসাইল ও জনদুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।