ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বাড়ীর পাশে রাস্তায় কুড়িয়ে পান একটি ব্যাগ। ওই ব্যাগে থাকা টাকার মালিককে ৫ দিন ধরে খুজছেন লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তি। টাকার মালিককে না পেয়ে শুক্রবার ও শনিবার দিনভর মাইকিং করেছেন। কুড়িয়ে পাওয়া টাকার মালিককে খোঁজ করতে মাইকিং করায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। তবে তার এমন কার্যক্রমে ইতিমধ্যে এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
টাকা কুড়িয়ে পাওয়া লুৎফর রহমানের বাড়ী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের স্কুলপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আসির উদ্দীনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।
লুৎফর রহমানের পাশের বাড়ী মিজানুর রহমান জানায়, আমাদের গ্রামের মধ্যে তিনি অত্যান্ত সাদা মনের মানুষ। তিনি করোনা মহামারীর আগে হজ্ব পালন করেন। আমার জানামতে তিনি এখন পর্যন্ত কারো সাথে ঝগড়ায় জড়াননি। এমন নমনীয় ব্যবহারে মানুষ খুব কম দেখেছি।
বালিয়াডাঙ্গী সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ বলেন, লুৎফর রহমানের এমন কাজ ইতিমধ্যে এলাকায় আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি সকলের নিকট প্রশংসিত হচ্ছেন। এমন মানুষ সমাজে খুজে পাওয়া দুস্কর। তাঁর আদর্শ সকলেই ধারণ করতে পারলে সমাজে ভালো কিছু আশা করা যায়।
বিষয়টি এলাকার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও বেশ চর্চা হচ্ছে। কয়েকজন ব্যক্তি ফেসবুকে পোস্টে কমেন্ট করেছেন 'এমন মানুষ আছে বলেই দেশে ভালো কিছুর আশা করা যায়। তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি'।
লুৎফর রহমান জানান, ব্যাগে কত টাকা তা এখন বলাটা ঠিক হবে না । কারণ, গেল ৫ দিন আগে বাড়ীর পাশে রাস্তায় একটি ব্যাগ ও ব্যাগের ভিতরে থাকা টাকা পেলে কুড়িয়ে বাড়ীতে নিয়ে রাখি। এরপর দুদিন রাস্তায় লক্ষ্য রাখলেও কেউ টাকার দাবি করতে আসেনি। পরে আমার ছেলেদের সাথে পরামর্শ করে টাকার মালিককে খোঁজ করতে মাইকিং করি। প্রকৃত মালিক নির্ধারিত টাকা এবং ব্যাগের রঙ বলতে পারলেই তার নিকট টাকা হস্তান্তর করে দেওয়া হবে। আর মালিককে খোজে না পাওয়া গেলে ওই টাকা ৩ বছর গচ্ছিত থাকবে। এরপরেও মালিক না পাওয়া গেলে সেটা দান করবেন তিনি।
লুৎফর রহমানের ছেলে আবু সাঈদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবা ইসলাম ধর্মের সব ধরণের নিয়ম-কানুন মেনে জীবন যাপন করছেন। আমরাও বাবার আদর্শে আদর্শিত। টাকা পাওয়ার পর বাবা এক ধরনের টেনশন করছেন। কারণ মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এমন বাবার সন্তান হতে পেরে গর্বিত।
বালিয়াডাঙ্গী ইউএনও যোবায়ের হোসেন ও বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আনাম ডন একই মন্তব্য করে বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার পর কেবলমাত্র সাদা মনের মানুষেরাই মাইকিং করে প্রকৃত মালিকের খোঁজ করে। এ ধরণের মানুষ সমাজে বেশি লক্ষ্য করা যায়না। এমন আদর্শ সকলের ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।