ঢাকা, মঙ্গলবার ৭ মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১

রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট,সেবা পেতে ‘টিপস’ নেন নার্সরা

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ,লক্ষ্মীপুর: | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৬ জুলাই ২০২৩ ০৪:২২:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
চিকিৎসক ও জনবল সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যে দিয়েই চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে এসে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। চিকিৎসক সংকটের কারণে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়পুর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী এখনও দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও জনবল। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের যে চিকিৎসক ও জনবল থাকার কথা, বর্তমানে তাও নেই এখানে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা, কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার বাসিন্দারা।
 
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন একজন। আরেকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ থাকলেও তিনি সপ্তাহে মাত্র দুইদিন কাজ করেন এ হাসপাতালে। আর বাকি চারদিন ডেপুটেশনে কাজ করেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে। এতে করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার বাসিন্দারা।
 
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিরত কয়েকজন রোগীর স্বজন জানায়, সরকারি এ হাসপাতালে সঠিক কোনো সেবাই পাওয়া যাচ্ছে না। রোগী নিয়ে পড়তে হচ্ছে আরও দুর্ভোগে। গাইনি, অর্থপেডিক, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
 
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হয়েও তারা সময়মতো ডাক্তারের দেখা পান না। ডাক্তাররা তাদের ইচ্ছেমতো আসেন এবং যান। টাকা না দিলে দেখা মিলে না সেবিকাদেরও। সেবা চাইলে অনেক সময় সেবিকাদের খারাপ আচরণের মুখে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
 
এদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বামনী এলাকার রূপালী বেগম, কহিনুর আক্তার ও রায়পুর পৌর শহরের মাকছুদ আলমসহ কয়েকজন রোগীর অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাওয়া গেলেও নির্দিষ্ট কক্ষে ডাক্তারদের দেখা পান না তারা। পরে বিমুখ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের। রয়েছে  প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগও।
 
 
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকারা নুর নাহার জানালেন, ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি থাকে।
 
এদিকে রোগীদের অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বাহারুল আলম জানালেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগের রোগীদের মানসম্মত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। ডাক্তার সংকট নিরসন হলে রোগীরা মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে জানান তিনি।