ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে সংরক্ষণের অভাবে ন্যায় দাম থেকে বঞ্চিত পানচাষীরা

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, করেসপন্ডেন্ট: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০৪:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়
 
লক্ষ্মীপুর জেলা সয়াবিন চাষের বহু বছর আগ থেকেই নারিকেল, সুপারির সাথে পান চাষও ঐতিহ্য। সয়াবিনের পাশাপাশি  ব্রান্ডিং দাবীদার ' পান চাষ ' এগিয়ে রয়েছে রায়পুর, সংরক্ষণের অভাবে ন্যায় দাম থেকে বঞ্চিত পান কৃষকরা। 
কয়েক যুগ ধরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা সহ জেলাজুড়ে চলছে পান চাষ। এমন কিছু সংখ্যক পরিবার রয়েছে যারা বাপ-দাদার আমল থেকেই পান চাষে নিয়োজিত রয়েছেন। মেঘনা বিধৌত এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের সু-উপযোগী হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পরিকল্পিতভাবে পানের চাষ।
 
লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে পান চাষে শিক্ষিত বেকারদের অনেকেরও আগ্রহ বাড়ছে। জেলাজুড়ে বেশ কিছু গ্রামের মাঠে নিজ মেধা ও উদ্যোগে পান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন কৃষকরা। আর আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। তবে জেলায় কোনো সংরক্ষণাগার না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পানচাষিদের।
 
স্থানীয়দের দাবি, প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে লক্ষ্মীপুরের উৎপাদিত পান রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব।
 
রায়পুর উপজেলার ক্যাম্পের হাট নামক গ্রামে
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একর প্রতি পানের বরজে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করে পরবর্তীতে লাভ করা যায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। প্রতি বিঘা জমির পানের বরজে মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি, শ্রমিক, পানের লতাসহ ১ থেকে দেড় লাখ টাকা প্রাথমিক অবস্থায় খরচ হয়। পরের বছর থেকে খরচ খুবই সামান্য হয়। কারণ একটি পানের বরজ তৈরি করার পর মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি সংস্কার ছাড়া ৪০-৪৫ বছর পর্যন্ত পানের বরজ অক্ষুণ্ন থাকে। সেখান থেকে পান পাওয়া যায়।
 
উত্তর চরবংশীর পান চাষী  কৃষক আব্দুর রহমানের  ২০ শতক জমিতে পানের বরজ রয়েছে। গত চার বছরে এ বরজ তৈরি ও আবাদ করতে তার ১ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখন পর্যন্ত কামাল হোসেন প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার বেশি পান বিক্রি করেছেন।
 
জানা যায়, জেলার রায়পুর উপজেলায় বসে সবচেয়ে বড় পানের পাইকারি বাজার। সপ্তাহের সোমবার এবং শুক্রবার রায়পুর বাজার, শনি এবং বুধবার হায়দারগঞ্জ বাজার, রবি ও বৃহস্পতিবার ক্যাম্পেরহাট বাজারে বসে পানের বড় বাজার। ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পান কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পানের চাহিদার জোগান দিচ্ছেন।একই এলাকার কামাল হোসেন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী আরেকজন চাষি জানান, বাংলাদেশে ভালো কোনো চাকরি যেন সোনার হরিণ। দীর্ঘদিন চাকরির খোঁজ করে চাকরি না পাওয়ায় বাবার সঙ্গে পানের বরজে সময় দেন। বর্তমানে তার ৫০ শতক জমিতে পানের বরজ রয়েছে। গত চার বছরে এ বরজ তৈরি ও আবাদ করতে তার ২ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখন পর্যন্ত কামাল হোসেন প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার বেশি পান বিক্রি করেছেন বলে জানান।
 
 
রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরআবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান নুরে হাওলাদার জিকু বলেন,  বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত পানের ভরা মৌসুম। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত পানের উৎপাদন কম হয়। ফাল্গুন মাসে বাড়ন্ত লতাকে নিচে নামিয়ে দেওয়াতে পানের উৎপাদন হয় না বললেই চলে।এ ছাড়া উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় পান চাষের দিকে ঝুঁকছেন অধিকাংশ কৃষক। তবে প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাবে অনেকে আবার পানের বরজের প্রসার ঘটাতে পারছেন না বলেও জানান কৃষকরা।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় প্রায় আড়াই হাজার বরজে পান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রায়পুর উপজেলায় ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রায় এক হাজার ৬২০টি বরজে পান চাষ করেন কৃষক।
এ বছরপ্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ১৫-১৬ হাজার বিড়া (৭২টি পানে এক বিড়া) পান উৎপাদন হয়েছে। স্থানীয় বাজারগুলো থেকে পাইকাররা এক পাই (১২ বিড়া), এক কুড়ি (৪৮ বিড়া) ও এক গাদি (১৯২ বিড়া) হিসেবে আকারভেদে ক্রয় করছেন। বর্তমানে প্রতি বিড়া পান আকারভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
এ ছাড়া জেলায় উৎপাদিত পান বিক্রি থেকে বছরে গড়ে ৫০ কোটি টাকা আয় হয়। চলতি বছর লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ টন পান উৎপাদন হয়েছে। এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আয় হবে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
 
রায়পুর উপজেলা কৃষি অফিসার তাহমিনা খাতুন বলেন, পানের বাজারের জন্য রায়পুর উপজেলা বিখ্যাত। এখানকার পান স্বাদে ও গুনে চমৎকার। সংরক্ষনের অভাবে কৃষকরা ন্যায্য পানের দাম পায়না। কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত সহযোগিতা করা হয় চাষীদের। 
 
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, জেলায় উৎপাদিত পান দেশ থেকে বিদেশেও সুখ্যাতি ছড়াচ্ছে। অনেক চাষী নিজ উদ্যোগে পান বাহিরে বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। 
 
 
লক্ষীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন জানান, পান চাষে রোগবালাই ও ঝুঁকি কম থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মাঠপর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।