ঢাকা, শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭শে পৌষ ১৪৩১

শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বৃদ্ধি, বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়

আহমেদ শাহেদ | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১০ জানুয়ারী ২০২৫ ০১:০৩:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে সরকারের শুল্ক-কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবনে নতুন চাপ তৈরি করেছে। শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দুটি অধ্যাদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এ অধ্যাদেশ দুটি হলো- মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই পরিবর্তনের ফলে দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্য ও সেবার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

কোন কোন ক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে

এই অধ্যাদেশের ফলে মোবাইল সেবার খরচ থেকে শুরু করে পোশাক, রেস্তোরাঁর খাবার, এমনকি মিষ্টি এবং ফলের মতো পণ্যেও বাড়তি ব্যয় গুনতে হবে।

* মোবাইল ফোন সেবা:

মুঠোফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে মুঠোফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে।

* পোশাক খাত:

ব্র্যান্ডের দোকান ও বিপণিবিতানের তৈরি পোশাকের আউটলেটে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

* রেস্তোরাঁ:

সব ধরনের রেস্তোরাঁর ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বাইরে খাওয়ার খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।

* অন্যান্য পণ্য ও সেবা:

টিস্যু, সিগারেট, বাদাম, ফলমূল (আম, আপেল, আঙুর, কমলালেবু, নাশপাতি), ফলের রস, চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, সানগ্লাস, ডিটারজেন্ট, রং, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, বিদ্যুতের খুঁটি—এসব পণ্যের দামও বাড়ছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যেই শুল্ক-কর বৃদ্ধির এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গত ১ জানুয়ারি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের প্রস্তাব পাস করা হয়। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে অধ্যাদেশ আকারে এটি কার্যকর করা হয়।

শুল্ক-কর বৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার খরচ বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সংকটময় করে তুলতে পারে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন সেবা, পোশাক, এবং খাদ্যসামগ্রীর মতো খাতগুলোর ওপর এই কর বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে।

অন্যদিকে, ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তারা শেষ পর্যন্ত বাড়তি মূল্য দিতে বাধ্য হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক সমাধান দিতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি চাপে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।