আজ রক্তাক্ত ১৩‘ই আগস্ট শহীদ আল্লামা আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহ) এর ৬ষ্ঠ তম শাহাদাত বার্ষিকী। হবিগঞ্জবাসী তথা সারা-বাংলাদেশের জন্য ইতিহাসের এক স্বরণীয় অধ্যায়। দিনটি কখনো ভূলার মতো নয়। অজস্র শোক, বেদনা ও মর্মাহত জড়ানো একটি দিন ছিল ১৩ই আগস্ট। এই দিনে সুন্নীয়তের নীলাকাশে খসে পড়েছিল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর সে নক্ষত্র হলেন এমেরিকার নিউইয়র্কে দূর্বৃত্তের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত, কুইন্স ওজনপার্ক নামক স্থানে অবস্থিত আল-ফুরকান জামে মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতিব জনপ্রিয় ইসলামী চিন্তাবিদ, পীরে কামেল শহীদ আল্লামা শাহ্ আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহ:)। যিনি ২০১৬ সালের ১৩‘ই আগষ্ট সত্যের আদর্শে পরাজিত শক্তি, নরপিশাচ ঘাতক হায়েনাদের হাতে আল ফুরকান জামে মসজিদের সামনে দিনটি ছিল রোজ শনিবার ইউ.এস.এ দুপুরের সময় ১:৫০ মিনিটে আততায়ীদের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি জোহরের নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি ছিলেন একটি বিস্ময়কর হিরন্ময় জ্যোতি। ছিলেন সকলের প্রাণের ব্যক্তিত্ব ও হৃদয়ের স্পন্দন। নিউ-ইয়র্কের মুসলমানদের মাঝে তিনি ছিলেন সুন্নীয়তের শান্তির দূত ও নির্ভীক সিপাহশালা।
তিনি আমৃত্যু ইসলামের সঠিকরূপ রেখা, তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শ প্রচার ও প্রসারে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের (গোছাপাড়া) গ্রামের শামছুল আরেফীন আল্লামা শাহ্ সূফি শামছুদ্দিন আখঞ্জী (রহ:) এর ঔরশে জন্ম নেয়া এই মহান বীরের জীবন কেটেছে, দীর্ঘদিন গাজীপুর রায়হানিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসেবে, অতপর শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জামে মসজিদ, হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার কেন্দ্রীয় সুন্নি জামে মসজিদ এবং সর্বশেষ নিউ-ইয়র্ক কুইন্স ওজনপার্কে অবস্থিত আল-ফুরকান জামে মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে।
জীবনের সর্বাঙ্গে তিনি ছিলেন অবিচল, আস্থাশীল ও সক্রিয়। তিনি সরলমনা মুসলমানদের শিখিয়েছেন আল্লাহ, নবী ও ওলীদের কিভাবে ভালোবাসতে হয়। তিনি’ই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন সেখানে, যার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে ইয়ানবী সালামু আলাইকা’র সাথে মোস্তফা জানে রহমত পেঁ-লাখো সালাম এর সুর লহরী প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। যা শ্রবণে নবী প্রেমিকদের হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যেত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই সাধারণ। জীবন-যাপন ছিল অনাড়ম্বর ও অতি সাদামাটা। মূলত সত্য, ন্যায়, ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও আদর্শ প্রচারে তিনি ছিলেন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। যার উজ্জ্বল প্রমাণ মানুষকে সত্যের পথিক বানানো। যার কারণে প্রায় মুসলিমরা এবং বিশেষ করে প্রবাসী বাঙ্গালীরাও ছিল তাঁর প্রতি ভক্ত ও শ্রদ্ধাশীল। মূলত তাঁর শাহাদাতের পেছনে এটাই আসল কারণ যে, তিনি কেন? এ ভাবে মানুষকে সত্যের পথিক বানাচ্ছেন। তাই অন্যায়, অসত্য ও তাগুতীবাদের প্রেতাত্মারা, ভারাটিয়া কিলারের মাধ্যমে গুলি করে নির্মমভাবে শহীদ করে দেয়। শহীদ আল্লামা শাহ্ আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহ:) এমন উচুঁ মাপের ইসলামী চিন্তাবিদ ছিলেন, যা তাঁর ইন্তিকালের সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর জানাযার নামাজে জন-সমুদ্রে পরিনত হয়েছিল। প্রিয় ব্যক্তিত্বকে হারানোর শোকে অশ্রু ঝড়াচ্ছিল সকলেই দু’নয়নে। তিনি শাহাদাতের সুধা পান করেই আজ জান্নাতী। মূলত শাহাদাত তাঁর একটি কামনা ছিল। তাঁর প্রতিটি দোয়া-মোনাজাতে বলতেন, আল্লাহ আমাকে শহীদি মৃত্যু দাও। আর মকবুল বান্দার দোয়া কবুল করেন আল্লাহ-তায়ালা। প্রিয় নবী (দ:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সত্যিই শাহাদাতের মৃত্যু চায়, সে তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ-তায়ালা তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছে দেন” (মুসলিম শরীফ)।
এভাবে হাজারো গুণে-বৈশিষ্ট্যে আল্লামা আখঞ্জী (রহ:) ছিলেন স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। আজ দীর্ঘ ৬ বছর পরও মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। আছে হাজারো স্মৃতি ও কথা। তিনি আজীবন সকল সুন্নী মুসলমানদের প্রাণে চীর-স্বরণীয় হয়ে থাকবেন।
দীর্ঘ দুই বছর যাবত আমেরিকার অদালতে বিচার কার্যক্রম চলার পর গত ২০১৮ সালের ২৪ই মার্চ বিচারের রায় ঘোষনা করা হয়েছিলো। এই রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছেন শহীদ আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহঃ) এর পরিবার-পরিজন। জুড়ি বোর্ডের সিদ্ধান্ত আমলে নিয়ে আদালত অভিযুক্ত অস্কার মোড়লকে আজীবন সাজা ঘোষনা করেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হবিগঞ্জ জেলা কর্তৃক আয়োজিত জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে শানে রিসালাত সুন্নী কনফারেন্স ২০১৮ এর অনুষ্ঠানে সুন্নী আন্দোলনের জন্য নিবেদিত প্রাণ, অমর ব্যক্তিত্ব শহীদ আল্লামা আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহঃ) কে মরণোত্তর স্মৃতি স্মারক পদক দেওয়া হয়। পদক গ্রহণ করেন তার বড় ছেলে ফয়েজ উদ্দিন আখঞ্জী।
উল্লেখ্য যে, শহীদ আল্লামা আলাউদ্দিন আখঞ্জী (রহঃ) ফাউন্ডেশন কর্তৃক ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ (১৩ই আগস্ট) শনিবার বাদ-মাগরিব গোছাপাড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত শাহ্ শামছুদ্দিন আখঞ্জী (রহঃ) ইসলামী একাডেমীতে মিলাদ-মাহফিল ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে পালন করা হবে।