অভিযানে যাওয়ার আগে হান্নানের স্ত্রী তাকে যেতে নিষেধ করেছিল, বলে ছিল ওই এলাকার লোকজন খারাপ তুমি যেও না। কিন্তু হান্নান বসের নির্দেশে রাতেই ঘর থেকে বের হয়ে অভিযানে যান। হাসপাতালে স্ত্রী তার তিন সন্তানকে নিয়ে এমন আহাজারিই করছিল। এখন আমার এই তিন সন্তানের কি হবে, কিভাবে দিন যাবে আমাদের? আমি এঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে শনিবার বিকেলে শিবগঞ্জে অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে গ্রাহকদের সাথে সংঘর্ষে পল্লী বিদ্যুতের কর্মী নিহতের ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এঘটনায় ৫জনকে গ্রেফতার করে শনিবার দুপুরে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলায় উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের আব্দুল গাফ্ফার আলীর পুত্র ভাইয়েরপুকুর বন্দরের ডিস ব্যবসায়ী রেজাউল করিমকে প্রধান আসামি করে পিরব পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের এজিএম রফিকুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করে। মামলা নং-১৮।
মামলার প্রেক্ষিতে আটমূল ইউনিয়নের বড় বেলঘড়িয়া গ্রামের ইজার উদ্দিনের ছেলে ইমরান কাজী (৩২), চন্দপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে আতাউর রহমান (২৮), একই গ্রামের খাজা মিয়ার ছেলে বাবর আলী (২৭), পরনান্দপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে আবু সাইদ (৫০) ও তার ছেলে সোহেল রানা (২৬) কে গ্রেফতার করে জেলহাজুতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আটমুল ইউনিয়নের ভাইয়েরপুকুর বাজার এলাকায়। হামলায় পল্লি বিদ্যুতের অফিস সহায়ক আব্দুল হান্নান নিখোঁজ হয়। পরে রাত্রী ১২টায় খবর পেয়ে পুলিশ ভাইয়েরপুকুরের অদূরে বাদলাদিঘী পাথারের ধানক্ষেত থেকে ২টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের সাকাওয়াত হোসেনের ছেলে ভাইয়েরপুকুর বাজারের ব্যবসায়ী আবু সাইদ ও আব্দুল আলিম দীর্ঘদিন যাবৎ ভাইয়ের পুকুর বাজারে বসত বাড়িতে ও রেজাউল করিমের একটি ক্যাবল নেটওয়ার্ক অফিস ঘরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ব্যবসা করে আসছিলো। এমন খবরের ভিত্তিতে উপজেলার পিরব পল্লি বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসের আওতায় উক্ত অফিসের এজিএম রকিবুজ্জামানসহ লাইনম্যান, মইন উদ্দিন, বিকাশ চন্দ্র সরকার, পিন্টু প্রামানিক, ফারুক হোসেন, আজিজুল হক, অফিস সহায়ক আব্দুল হান্নানসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় আবাসিক সংযোগকৃত বাড়ীতে অবৈধ ভাবে মিটার বাইপাস করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। তারা অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে। এতে আবাসিক বিদ্যুৎ ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপার্যেয় আব্দুল হালিম, আবু সাইদ, বুলবুল ইসলাম ও সোহাগ বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেধরক মারপিট করে।
এব্যাপারে পিরব পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসে এজিএম রফিকুজ্জামান বলেন, আবু সাইদ ও আব্দুল আলিম এবং একটি ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী রেজাউল করিম অবৈধ ভাবে মিটার বাইপাস করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য রাতেই বের হই। প্রতিপক্ষরা হঠাৎ করে আমাদের উপর হামলা চালায়। তবে রাতেই কেন কোন নিরাপত্তা না নিয়ে বিদ্যুৎ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলেন, সেবিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি এজিএম রকিবুজ্জামান। তবে তিনি জানান, এ অবৈধ সংযোগগুলো রাতেই নেয়া হয়, রাতে না গেলে পাওয়া যেত না।
বাড়ির মালিক সাইদ এর বাবা সাকাওয়াত হোসেন বলেন, আমার জানামতে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নেই। আমার ছেলেদের বাড়িতে অবৈধ সংযোগ নেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার ছেলেদেরকে ফাঁসানো হচ্ছে।
স্থানীয় আটমূল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, আমার জানামতে এখানে কোন গণপিটুনীর ঘটনা ঘটেনি। তবে ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পল্লী বিদ্যুৎ এন অফিস সহকারী হান্নান দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ স্থানীয় একটি বিল থেকে লাশ উদ্ধার করে।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক কুমার দাস বলেন, এঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গত রাত ২টার দিকে আব্দুল হান্নানের লাশ আটমূল ইউনিয়নের বাদলাদিঘী ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্ত শেষে হান্নানের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় ৫জনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
