ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

শৈলকুপার ডাকুয়া নদীর অস্তিত্ব শুধুই মানচিত্রে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২৪ মার্চ ২০২৩ ০২:২০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
 
প্রথমে দেখলে মনে হবে একটি পুকুর। কিন্তু না, এটি ঝিনাইদহের শৈলকুপার এক সময়ের খরস্রোতা ডাকুয়া নদী ও খাল। এই নদী ও খাল চলে গেছে ভূমি দস্যুদের দখলে। নদীর বুকে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন দখলদাররা। গাছ-গাছালিসহ দোকানপাট ও পাকা স্থাপনাও তৈরি করেছে পুরো এলাকাজুড়ে। আবার কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ ভরাট করে অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া হয়েছে। শুধু মানচিত্রে ঠাঁই হয়েছে সরকারি খাল ও নদীটির। সরকারি নদী ও খাল রক্ষায় সরকার ও প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও শৈলকুপায় বাস্তবে এই নদী ও খালের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই! যে ডাকুয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়ন ও আশপাশে সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে ওঠে, সে ডাকুয়া নদীই এখন মৃত।
 
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নদী ও খাল রক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও বাস্তবে এই নদী ও খাল রক্ষায় কোনো গুরুত্বারোপ করেনি সংশ্লিষ্টরা। যে নদীকে কেন্দ্র করে এক সময় সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে ওঠে ওই এলাকায় সেই নদী এখন মৃত। এমন অবস্থায় ভূমি দস্যুদের হাত থেকে ডাকুয়া নদী ও পার্শ্ববর্তী খাল পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যদিকে এই নদী ও খাল রক্ষার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহ উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে ডাকুয়া নদী ও খাল উত্তর মির্জাপুর থেকে বৃত্তিপাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকলেও এখন এর কোনো নমুনা পাওয়া যায়নি। এটি উত্তর মির্জাপুর মৌজার ৭৩৪ দাগে গিয়ে পড়েছে। ম্যাপে ছাড়া বাস্তবে ডাকুয়া নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী ডাকুয়া নদীর শাখা-প্রশাখা সরকারি খাল হিসেবে থাকলেও বর্তমানে খালের জায়গা প্লট আকারে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে খালটি।
 
সূত্র জানায়, ডাকুয়ার বিস্তৃত এতটাই বড় ও চওড়া ছিল যা নদী হিসেবে থাকলেও বাস্তবে এর শাখা-প্রশাখা ব্যক্তিদের নামে রেকর্ড করে দিয়েছে সরকারের অসাধু কর্মকর্তারা। ডাকুয়ার বেশ কয়েকটি শাখা-প্রশাখা ছিল যা নদীর মতো প্রবহমান ও ভরা যৌবন ছিল। এই নদী ও খালকে ঘিরে কৃষি, চাষাবাদ হতো মাঠের পর মাঠ। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। গড়ে ওঠে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বসতি। স্বাধীনতার আগে এই খালকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহসহ যাবতীয় কাজ করত সরকারি এই বিশাল খালের উপর নির্ভর করে।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর নানা সময় ও আরএস জরিপে উত্তর মির্জাপুর অংশে খালের ৮১ ও ৫৬৮ নম্বর দাগ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়েছে। সেটেলমেন্ট ও ভূমি অফিসের দুর্নীতিগ্রস্ত অসাধু কর্মকর্তারা এসব সরকারি খালের জায়গা বিলীন করে দিয়েছে। ডাকুয়া নদী ও খালের বর্তমান কিছু অংশের রেকর্ড মূলে মালিক বাবলু জোয়ার্দার বলেন, আমার বাপ-দাদাদের আমল থেকে এই জমি আমরা ভোগ দখল করছি। এটা সরকারি খাল বা নদীর জায়গা নয়।
 
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বিন সাত্তার জানান, পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছি এখানে ডাকুয়া নামে বড় নদী ছিল। এখন সবকিছুর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। ইচ্ছামতো দখলদাররা নদী দখল করে নিয়েছে। সরকারি খালের আরএস রেকর্ড বাতিলসহ অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
 
তিনি আরও জানান, ডাকুয়া খাল ও নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি অফিস বরাবর বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছি না।
 
কাঁচেরকোল ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন জোর্য়ার্দার বলেন, ভূমি দস্যুরা ডাকুয়া নদী দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। দখলদারদের কাছ থেকে ডাকুয়া নদী ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।
 
এ ব্যাপারে শৈলকুপার সহকারী কমিশনার (ভুমি) বনি আমিন বলেন, সরকারি খাল ও নদীর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি এসব জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।