ঢাকা, রবিবার ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৬শে কার্তিক ১৪৩১

শ্যামনগর থেকে সোনালী আঁশ পাট হারিয়ে যেতে বসেছে

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৮ অগাস্ট ২০২৪ ০৫:৩২:০০ অপরাহ্ন | খুলনা

সোনালী আঁশের দেশ বাংলাদেশ। অথচ এই সোনালী আঁশ পাট উপকুলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে হারিয়ে যেতে যেতে বসেছে।

 

বাংলাদেশে এক সময় পাট রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হত। এখন আর আগের মত পাট চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেননা চাষিরা। বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটি এক সময় পাট চাষের জন্য খুব উপযোগি থাকলেও বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে অনেকেই মতামত প্রকাশ করেছেন।

 

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পাট চাষি নিরঞ্জন মন্ডল বলেন এক সময় বাড়ীতে পাট চাষ করে বাড়ীর চাহিদা মিটিয়ে পাটকাঠি ও কোষ্ঠা /পাট বিক্রী করা হত।

 

বুড়িগোয়ালিনী ইউপির পাট চাষি জি এম মিজানুর রহমান বলেন পূর্বে তার বাড়ীতে অনুমান ৪/৫কাঠা জমিতে পাট চাষ করা হত। বর্তমানে পাট চাষের সময় বৃষ্টি পাত হয়না ও মিষ্টি পানির অভাবের কারণে, তাছাড়া পাট জাগ দেওয়ার জায়গার অভাবে পাট চাষ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা।

 

নকিপুর গ্রামের গৃহিনী কল্যাণী রানী, আবাদচন্ডিপুর গ্রামে বয়বৃদ্ধ নারী শেফালী বেগম বলেন আগে গ্রাম গঞ্জে পাট বা কোষ্টা দিয়ে  শিকা, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরী করা হত। রান্না ঘরে পাটের তৈরী শিকায় বিভিন্ন কিছু ঝুলিয়ে রাখা হত। যেটা দেখতেও সুন্দর লাগত। পাট শাকও খুব উপকারি খাদ্য। এখন পাটের অভাবে এগুলি হারিয়ে যাচ্ছে তার উপর নতুন প্রজন্ম পাটের তৈরী গৃহস্থালী উপকরণ সম্পর্কে পরিচিতি হতে পারবেনা।

 

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন উপজেলায় চলতি বছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হেক্টর। অর্জিত হয় ২ হেক্টর। গত বছরও পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হেক্টর। অর্জিত ছিল গতবার ৩ হেক্টর। পাট চাষ সাধারণত বারটি ইউপির মধ্যে উপজেলার ভূরুলিয়া, নুরনগর, কাশিমাড়ী ইউনিয়নে বর্তমানে হয়ে থাকে। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী সহ অন্যান্য ইউপিতে কম জায়গায় পাট চাষ হয়ে থাকে। 

 

তিনি বলেন পাটের কয়েকটি জাতের মধ্যে তোষা ও দেশি জাতের পাট চাষ এই এলাকায় হয়ে থাকে। ফাল্গুন , চৈত্র ও বৈশাখ মাসে সাধারণত পাটের বীজ বপন করা হয়। এই এলাকায় যে জাতের পাট চাষ করা হয় তার জীবনকাল ১২০ থেকে ১৩০দিন। যেখানে বৃষ্টি হলে পানি বেশি সময় দাঁড়ায় না এমন উঁচু জমি নিধারণ করা হয়। দো-আঁশ মাটি পাট চাষের জন্য উপযোগি হলেও উপকুলের শ্যামনগর দো-আঁশ এঁটেল মাটি বিরাজ করে। বীজ বপনের কয়েক সপ্তাহ পর পানির দরকার হলেও শুকনা মৌসুমে শ্যামনগর উপজেলায় মিষ্টি পানির সংকট রয়েছে।

 

শ্যামনগর উপজেলা থেকে পাট চাষ হারিয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন  শ্যামনগর উপজেলায় লবন পানিতে চিংড়ী চাষের প্রাধান্য থাকায় প্রায় সকল ইউনিয়নে কমবেশি লবন পানির চিংড়ীর ঘের রয়েছে। ফলে মিষ্টি পানির সংকট রয়েছে সর্বত্র। শুকনো মৌসুমে পানি সংকট থাকা, পাট জাগ দেওয়ার পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকা, পাট প্রসেসিং শ্রমিক সংকট, বৃষ্টিপাত কম হওয়া, মাটিতে কোথাও কোথাও ব্যাপক লবনাক্ততার প্রকোপ থাকা সহ অন্যান্য কারণ উল্লেখ করেন। জানা যায়,পাট সাথারণত ৮ থেকে ১০ পিপিটি লবন সহ্য করতে পারে। কিন্ত উপজেলায় কোন কোন ইউনিয়নে তার চেয়ে বেশি পরিমান পিপিটি রয়েছে পানিতে।

 

উপজেলার শ্যামনগর বাদঘাটা গ্রামের কৃষক কুমুদ রঞ্জন গাইন বলেন পাট চাষ হারিয়ে যাওয়ার কারণ শ্যামনগরে মিষ্টি পানির অভাব। খাল গুলি লবন পানিতে ভরা। মিষ্টি পানি সংরক্ষণ হয় এমন খালের অভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে পাট চাষের মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়না। শুকনা থাকার কারণে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। পলিথিন ও  পাস্টিকের যুগে গ্রাম গঞ্জে পাটের তৈরী ব্যাগ সহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার না করায় পাট চাষে কৃষকরা আগ্রহ কম দেখায়। 

 

তিনি বলেন  উপকুলের শ্যামনগরে পাট চাষকে বাঁচাতে আমন ও বোরো ফসলের মত  প্রনোদনার ব্যবস্থা করা দরকার একই সাথে লবন সহিষ্ণু জাত বিতরণ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হলে পাট চাষ ফিরে আসতে পারে। 




সবচেয়ে জনপ্রিয়