বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন খুলনা মহানগরীর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের শ্রমিক সমাজই জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। তারাই দেশ ও জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। দেশ ও জাতির যেকোন ক্রান্তিকালে শ্রমজীবী মানুষ ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু কোনো সরকারই দেশের শ্রমজীবী মানুষের যথাযথ মূল্যয়ন করেনি বরং তারা এখনো অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন খুলনা মহানগরী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল পরিবহন শ্রমিক শাখার উদ্যোগে শনিবার সকাল ১০টায় টার্মিনালে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আমরা দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই দেশকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার মুক্ত করে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপশাসন-দুঃশাসনমুক্ত শ্রমিকবান্ধব ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আমরা আর দুর্নীতি, দুঃশাসান, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুপ্তহত্যা ও চাঁদাবাজীর যুগে ফেরৎ যেতে চাই না। এ জন্য আমাদের বীর সন্তানরা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষ জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। তাদের হাড়ভাঙা শ্রমের মাধ্যমেই আমাদের রেমিট্যান্স আসে। পরিবহন ও কল-কারখানা চলে। মূলত, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোই তাদের হাতেই পরিচালিত হয়। কিন্তু তারা এখনো তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। মূলত দেশে ইসলামী শ্রমনীতি চালু না থাকায় দেশের শ্রমিক সমাজ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ইসলাম শ্রমিকদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। হাদিসে রাসুল (সা.) শ্রমিকদেরকে আল্লাহর বন্ধু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই শ্রমজীবী মানুষের যথাযথ মূল্যায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে ইসলামী শ্রমনীতি চালু করতে হবে।
তিনি দেশে ইসলামী শ্রমনীতি চালুর জন্য শ্রমিক সমাজকে ইসলামের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আরও বলেন, শ্রমিকরা এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে শুরু করে কর্মস্থলে সুরক্ষার অভাব রয়েছে। এই সকল বিষয়গুলো আমরা নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছি। আপনারা সবাই শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সঙ্গে থেকে আমাদের এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবেন বলে আশা করি। আসুন, আমরা একসঙ্গে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করি।
তিনি বলেন, এদেশে সব ধর্মের-বর্ণের মানুষ মিলেমিশে আছি। বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা একটি বৈষম্যহীন ও সাম্যের বাংলাদেশ গঠন করতে চাই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের ত্যাগ এখনও শেষ হয় নাই। আরও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যে জাতির নেতারা ঘুমিয়ে থাকে সে জাতি যেকোনো সময় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে।
পরিবহন শাখার সভাপতি কামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম শিকদারের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন খুলনা মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, খুলনা অঞ্চলের পরিবহন সম্পাদক আল ফিদা হোসেন। বক্তব্য রাখেন মহানগরী সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক আল হাফিজ সোহাগ, পরিবহন শ্রমিকনেতা আব্দুল বারেক, আব্দুর রশিদ, মারুফ হোসেন, মো. ফিরোজ, সুমন, আব্দুর রব, বেল্লাল, জাকির, নুর ইসলাম, মুন্না, জাহাঙ্গীর, হাফেজ মুজাহিদ, আকরাম, কামরুজ্জামান, জুয়েল, আকতারুল হাসান, এমাদুল, আ. সাত্তার, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
সম্মেলনে মু. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও আসলাম শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল পরিবহন শাখার ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে