আসন্ন চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার নয়টি ইউপি'তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে শেষ বারের মতো ভোট প্রার্থনা করতে দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে চলছে নানা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি।
তবে সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তোড়জোড়। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। সন্ধ্যার থেকে নির্বাচনী আমেজে ভরপুর হয়ে ওঠে গ্রাম। স্থানীয় বাজারগুলোর চায়ের টেবিল আর প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয় ঘিরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এটি চলে সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত।
সময়ের সাথে সাথে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে দেখা যাচ্ছে সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের। অধিকাংশ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ওইসব প্রার্থীদের পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি বিরাট অংশের নেতাকর্মীদের রয়েছে নিরব সমর্থন।
এ বিষয়ে একাধিক নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন বিশ্লেষক দৈনিক বায়ান্নকে বলেছেন, শ্রীবরদী উপজেলার নয়টি ইউপি'তে আওয়ামী লীগের হারের প্রধান কারন হতে পারে দলীয় কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরব সমর্থন। প্রতিক বরাদ্দ থেকে শুরু করে আজ ২২ ডিসেম্বর বুধবার উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে একাধিকবার সরেজমিন ঘুরে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারসহ নির্বাচন বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে উঠে আসে এমন তথ্য।
কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কতিপয় নেতাকর্মী, সমর্থক গোপনে ভোট চাইছেন বিদ্রোহী আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে। এমনকি তিনি কয়েকজন পদধারী নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
তবে সচেতন ও শিক্ষিত ভোটারদের সাথে কথা বলে যানা যায় অন্য কথা। তারা জানান, যোগ্য, সৎ ও জনপ্রিয় বা পছন্দের ব্যাক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ জন্য তারা তাদেরকে অনেকটাই মেনে নিতে পারছেন না। মানুষ সুষ্ঠু ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে দলমত নির্বিশেষে যোগ্য প্রার্থীদেরই তারা ভোট দিবে।
নৌকা প্রতীকের একাধিক প্রার্থীই জানান, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কারা বিপক্ষে কাজ করছে তা জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে শাস্তির দাবি জানাবেন। তারা আরও বলেন, ভোটের মাঠে আমরা কোন ক্রমেও বিদ্রোহীদের চেয়ে কম নই। প্রচার-প্রচারণা আর গণসংযোগে দ্রুতই আমাদের মাঠ আগাচ্ছে। জেলা ও উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আমাদের সাথে কাজ করছেন।
নৌকার ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা নিয়ে শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম লিটনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক সংগঠন এখানে নেতা কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই অনেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী অবস্থান নিয়েছে। তবে এতে আমাদের ফল বিপর্যয় হবার সম্ভাবনা নেই। যোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের উন্নয়ন তরান্বিত করতে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে প্রতিটি ভোটারের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট আহবান করা হচ্ছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এমএ মতিন বলেন, দলের সব নেতাকর্মী মাঠে নামলে বর্তমান দৃশ্যপট অনেকটাই পরিবর্তন হবে। গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট তরিকুল ইসলাম ভাষানী বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কেউ কেউ কাজ করছে এমন গুটিকয়েক তথ্য আমি পেয়েছি। তাদের একটা তালিকা আমরা করবো। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে শঙ্কা ও উৎকন্ঠা আরও বাড়ছে। একাধিক প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছ থেকে মিথ্যা মামলা, হামলা ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে কোন ঘাটতি দেখা যায়নি।
কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ খান নুন বলেন, আমি সাবেক চেয়ারম্যান ছিলাম তাই এই বারও মোটরসাইকেল প্রতিকের প্রার্থী হয়েছি। গত ধাপের নির্বাচন গুলোর মতো এবারো সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হোক এটাই আমার চাওয়া। তিনি আরও বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার রয়েছে; এই অধিকার প্রতিষ্ঠা পেলে জনগণের পছন্দের প্রার্থী জয়ী হবে অন্যথায় গ্রহনযোগ্যতা হাড়াবে নির্বাচন যন্ত্র।
এদিকে ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টিতেই নৌকার পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তবে নির্বাচনী মাঠে ভোটের পরিবেশ, পরিসংখ্যান ও ভোটারদের অবস্থান বদল হচ্ছে সময়ে সময়ে। তাই কে জিতবে, কে হারবে- এটা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত।