গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এই প্রথম নারী মেয়র হিসেবে নবনির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন। তবে তিনি দেশের দ্বিতীয় নারী সিটির মেয়র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। এর আগে ২০১১ সালে প্রথম নারী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র থেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে এই প্রথমবার নির্বাচন করেন। গত (২৫ মে) রোজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত গাসিক নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ফলে নৌকা প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। স্বশিক্ষিত জায়েদা খাতুন নির্বাচনী হলফনামায় পেশা ব্যবসা লেখা হলেও মূলত তিনি গৃহিণী। নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী জায়েদা খাতুনের জন্ম ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, পিতা সামছুল ইসলাম, মাতা আফাতুন, স্থায়ী ঠিকানা কানাইয়া, গাজীপুর সদর, গাজীপুর। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’, তাঁর স্বামী মোঃ মিজানুর রহমান তিনি পাঁচ বছর আগে মারা গেছে। জায়েদা খাতুনের দুই ছেলে এক মেয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা হামলার তথ্য নেই। হলফনামায় জায়েদা খাতুনের আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে শেয়ার মূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। ঘোষিত ফলাফলে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত জায়েদা খাতুনের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা। মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে জায়েদা খাতুনকে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। মূলত ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজকে ভিত্তি করেই তিনি রাজনীতিতে আসেন। জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তিনি এই দুইটি পদে পুরো মেয়াদকাল দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এদিকে এই প্রথম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নারী মেয়র পেয়ে তাদের নিজ বাসভবন ঘিরে ৫৭টি ওয়ার্ডের দোকানে, দোকানে, রাস্তাঘাটে উল্লাসে মেতে ওঠেছে নগরবাসীরা। দেখা যায় (২৫ মে) রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে ফলাফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের বাইরে ও বিভিন্ন এলাকায় বিজয় মিছিল বের হয়েছে জাহাঙ্গীর আলম ও জায়েদা খাতুনের কর্মী সমর্থকদের। এসময় তাদের ঘড়ি ঘড়ি স্লোগানে উল্লাসে মেতে ওঠতে সাধারণ জনগণ। এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাজ করতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। তিনি আরো বলেন, অনিয়মের বেলায় কোনো ছাড় নেই, দুর্নীতির বেলায় থাকবে জিরো পয়েন্ট। কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আমার ছেলে হলেও রেহাই পাবে না। গত (২৭ মে) রোজ শনিবার রাতে গাজীপুর নগরীর হারিকেন এলাকার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় এসব কথা বলেন জায়েদা খাতুন। এসময় ছেলে এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমও সঙ্গে ছিলেন। মেয়র বলেন, প্রতিমাসেই বিভিন্ন সুন্দর পরিকল্পনা করে কাজ করবো। নগরীর রাস্তা-ড্রেন নির্মাণকে অধিকার দেবো। পরে পর্যায়ক্রমে ময়লা-আবর্জনা ও পরিবেশ দূষণ মুক্তকরণসহ অন্যান্য কাজ করবো। এসব কাজে আমি দুর্নীতি সহ্য করবো না। আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়েছে। তাই আমিও তাদের কথা স্মরণ রেখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পড়ে থাকা কাজগুলো এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন পরিকল্পিত কাজ গুলো দ্রুত শেষ করবো। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ও মিডিয়াকেও সঙ্গে রাখবো। আমার ছেলের সকল অসম্পূর্ণ কাজ গুলো সম্পূর্ণ করবো। এ সময় সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার গর্ভধারিনী মা মাজেদা খাতুন দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। আমার মা আমার শিক্ষক তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা ছেলে মিলে সবার সহযোগিতায় সুন্দর একটি নতুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন উপহার দিতে চাই। এ শহর সকলের, সবার সহযোগিতা পেলে আমরা একটি পরিকল্পিত শহর উপহার দিতে পারবো। গত (২৮মে) রোজ রবিবার সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন সহ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার আলেম এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সফর সঙ্গী নিয়ে গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নবনির্বাচিত মেয়র জাহেদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগামী কিছুদিনের ভিতর গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আমার মা জায়েদা খাতুন কে নিয়ে আমি দেশনেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাবো, আমার এবং আমার মায়ের অভিভাবক প্রিয় নেত্রীর কাছ থেকে নতুন ধারায় পরিকল্পিত শহর গড়ার নতুন উদ্যোগ নিয়ে আসবো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জন্য। শুধু তাই না সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসায় দেশনেত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার লক্ষে আমার মায়ের এবং আমার সাহস যোগাবে।