১১ নং সেক্টরের বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ হাফিজুর রহমান (৭০) ৭১ সালে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও সেই স্বাধীন দেশে আজ তিনি নিজেই গৃহহীন, এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত সম্মানি ভাতা থেকেও বঞ্চিত। তিনি এখন তার নিজ জন্মভ’মি গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার রতনপুর গ্রামের একটি মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। থাকছেন অপরের দেওয়া এক খন্ড জমিতে একটি কুঁড়ে ঘর তুলে।
নিজে একজন ভারতীয় তালিকা এবং মুক্তিবার্তা তালিকাভুক্ত এই মুক্তিযোদ্ধা মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার যুদ্ধকালীন কমান্ডার খায়রুল ইসলাম, সহযোদ্ধা মোঃ ইব্রাহিম খলিল্লাহ, মোজা ব্যাপারী, আব্দুর রশিদ এবং নুরুজ্জামান প্রমুখকে সাথে নিয়ে নিজের দুর্ভোগের কথা লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে হানাদার মুক্ত করার জন্য নিজ এলাকা ফুলছড়ি থেকে ভারতীয় মেঘালয় রাজ্যে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কমান্ডার মোঃ খায়রুল ইসলামের অধীনে ২৩ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তার ৩ নং প্লাটুনের কমান্ডার ইব্রাহিম খলিল্লাহ পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি এসএলআর তুলে দেন। তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার ভারতীয় তালিকা নং ৪১৯২৫ এবং লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় তার নম্বর ০৩১৭০৪০১৯১। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ (বামুস) এর সনদ নং ২৫৬৭৬২। অস্ত্র হাতে তিনি যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন, তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যা ও নদী ভাঙ্গন জনিত কারণে তিনি ভুমিহীনের পরিনত হন। তার ঠাঁই হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। দুভাগ্যের বিষয় উল্লেখিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার ও সুরক্ষার কাজের জন্য ২০১৯ বাঁধের আশ্রয়টিও উচ্ছেদ হয়ে যায়। তারপর থেকেই তার ঠাঁই মিলেছে অপরের দেওয়া এক খন্ড জমিতে।
বয়সের কারণে তিনি শাররিক শ্রমে কাজ করতে পারেন না। এলাকাবাসী দয়া করে স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজিনের দায়িত্ব দেওয়ায় সেখান থেকে পাওয়া সামান্য অর্থে তিনি ও তার বৃদ্ধা স্ত্রীর জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। অথচ দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান চালু হওয়ার পর থেকে ২০১০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবরে বহুবার লিখিত আবেদন করেছেন।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিদের্শনায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা কমিটির সদস্য সচিব একটি তদন্ত করে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা (হাফিজুর রহমান) এবং ভাতা পাওয়ার যোগ্য সে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। যথারীতি ওই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা ভাতা বায়স্তবায়ন কমিটি তার ভাতার প্রাপ্তির বিষয়টি অনুমোদনও করেছেন। তারপরও হাফিজুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা সম্মানি ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বঞ্চনার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জেলার ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সাব এডমিনিষ্ট্রিটেটিভ অফিসার জোবায়ের হোসেন চৌধুরীর অনৈতিক দাবি পুরুন না করায় শেষ পর্যন্ত তার প্রাপ্য বরাদ্দ মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান পাচ্ছে না।
সেকারণে তিনি তার এই অসহায় অবস্থা কথা বলার জন্য বগুড়া প্রেসক্লাবে এসেছেন এবং তার যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও অন্যান্য সহযোদ্ধারা তাকে সহযোগিতা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে কান্না ভেজা কন্ঠে তিনি বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে আমার এই অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরলে আমার বিশ^াস বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নজরে বিষয়টি আসলে তিনি এর সুরাহা করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।