করোনাকালের দুই বছরের ধাক্কা সামলে উঠেছিলেন সিলেটের মানুষ। কিন্তু গ্রীষ্মে অতিবৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় আবারো মানুষজন পড়েছেন বেকায়দায়। করোনাকালের চেয়েও ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন সিলেটের সব শ্রেণি পেশার মানুষ। উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে ডুবেছে সিলেট নগরের প্রায় অর্ধেক এলাকা। বানবাসী হয়েছেন ১৩ উপজেলার মধ্যে ১০টির শতাধিক ইউনিয়নের লোকজন। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে। সে ক্ষতি অংকের হিসেবে পোষাবার নয়! গ্রীষ্মে ভয়ঙ্কর বন্যা ২০০৪ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়েছে।
গত ১১ মে থেকে অতিবৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বুকে ঠাঁই দিতে পারেনি সুরমা। ফলে পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে গ্রাম-নগর সব প্লাবিত হয়েছে। কৃষিজীবী থেকে ব্যবসায়ী, সব শ্রেণির মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
বানবাসী হয়েছেন অন্তত ১০ লক্ষাধিক মানুষ। বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন কৃষকরাও। সম্প্রতি ঘরে তোলা বোরো ফলসও বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবারিত বর্ষণে ঘরে রাখা ধানে চারা গজিয়েছে।
শনিবার (২১ মে) থেকে নদ-নদীর পানি খানিকটা স্থিতিশীল হওয়াতে নগর থেকে পানি নেমে যায়। চারিদিকে মানুষ যখন খাবার সংকটে, তখন বন্যা পরবর্তী ক্ষতির দিকটা ফুটে উঠছে ক্রমশ।
সরেজমিন নগরের কাজিরবাজার ধান-চালের মিল ও আড়তে গিয়ে দেখা গেল বৈরী চিত্র। গুদামে রাখা সারি সারি ধান-চালের বস্তা ভিজে নষ্ট হয়েছে বন্যার পানিতে। তা দেখে ব্যবসায়ীদের চোখে ছল ছল করছে জল। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন খোঁজ না নেওয়ায় অনেকে বোবা কান্নায় ক্ষোভ ঝাড়লেন।
দেখা গেছে, বন্যার পানি কমতে শুরু করে। গুদামের সাটার খুলতেই বেরিয়ে আসছে ধান-চাল পচা দুর্গন্ধ। মজুতকৃত ৫০ কেজির হাজার হাজার বস্তা চাল এবং ২ মন ওজনের ধানের বস্তার স্তূপ ভিজে পচন ধরেছে। কেউ স্যালো মেশিন লাগিয়ে সেচ দিয়ে গুদাম থেকে পানি সরাচ্ছেন। প্রতিটি গুদামে ঢুকেছে বন্যার পানি। হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাখার অভাবে আড়ৎদাররা ধান-চালের বস্তা সরানোর সময় পাননি।
ধান-চালের পচা দুর্গন্ধে এলাকার বাতাসও দুষিত হয়ে গেছে। যেগুলো এখন গো-খাদ্যেও ব্যবহার করার অনুপযুক্ত। ব্যবসায়ীদের এ ক্ষতি যেন চোখে দেখে সহ্য করার মতো নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের কাজিরবাজার মোস্তাক এন্ড ব্রাদার্সের ৫টি গুদামের এক একটিতে অন্তত সহস্রাধিক বস্তা করে চাল রাখা ছিল। যেগুলো বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনোমতে কিছু চাল সরাতে পারলেও বেশিরভাগ বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে। একইভাবে এম এস অটো রাইস মিল, মতিন ব্রাদার্স, হাসান ব্রাদার্স, ফাইয়ান ও পদ্মা রাইস মিল, দয়া ও জামান মিল, রঙ্গেশ অটো রাইস মিলের হাজার হাজার বস্তা ধান-চাল রাখা ছিল। যেগুলো পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে।