সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার জনশূন্য হরিপুর বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে না। ২-১ টি দোকানপাট খোলা থাকলেও সেসব দোকানে তেমন একটা বেচা কেনা হয় না। তবে সন্ত্রাসী বাহিনীকে মাঝে মধ্যে মোটর সাইকেল মহড়া দিতে দেখা যায়। মোটর সাইকেল মহড়া জনশূন্য বাজারে নেমে আসে আতঙ্ক। রফিক- লুৎফুর সিন্ডিকেট মসজিদ মাদরাসার আয়ের উৎসকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। হাফিজ মাওলানা সালেহ আহমদ হত্যার পর ওই এলাকার সাধারণ মানুষ ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পক্ষান্তরে খুনের সঠিক তথ্য বের হয়ে আসার পর খুনি চক্রটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
৩ এপ্রিল রোববার দিনগত রাত দেড়টা থেকে পরদিন সোমবার ৪ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহমদের পক্ষে হাউদপাড়া ও সাবেক চেয়ারম্যান রশিদ আহমদের পক্ষে শ্যামপুর গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ থামাতে যান মাওলানা সালেহ। ইমাম ও মুরুব্বিদের একটি প্রতিনিধি দলে ছিলেন তিনি। মাওলানা সালেহ মাটিতে পড়ে গেলে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকের পক্ষ তাকে ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে নিয়ে পিটিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
হত্যাকান্ডের পরপরই ব্যাপক অনুসন্ধান করা হয় ওই এলাকায়। বের হয়ে আসে হাফিজ সালেহ আহমদ হত্যাকান্ডের মূল রহস্য। হরিপুর বাজারে রয়েছে ঐতিহ্যবাহি মাদরাসা ও মসজিদ। এই মাদরাসা ও মসজিদের আয়ের উৎস্য ছাত্রদলের সাবেক ক্যাডার লুৎফুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিক তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়। ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। লাশ হয়েছেন কোরআনে হাফিজ সালেহ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছাত্রদলের ক্যাডার পরিচয়দানকারী লুৎফুর নেপথ্যে থেকে ভয়ঙ্কর কর্মকান্ড চালাতে পছন্দ করেন। ঘটনার দিন হাফিজ সালেহ আহমদের লাশ পড়ার পরপরই পুলিশের উপর দায় চাপানোর জন্যে অপচেষ্টা চলে। অপচেষ্টা অনুযায়ী পুলিশের টিয়ারসেলে হাফিজ সালিহ নিহত হয়েছেন বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয় পরিকল্পনা। হাফেজ সালেহ আহমদ খুনের নেপথ্য কারণও বের হয়ে আসে। চোরাকারবারী লুৎফুর থেমে নেই। তার সাথে রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী রফিক।
লুৎফুর সম্পর্কে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে নানান তথ্য। স্থানীয়রা জানিয়েছেন দরবস্ত এলাকায় লুৎফুর রহমান নিজকে ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিয়ে এক সময় চুরি, ছিনতাইসহ নানান ধরণের রাহাজানী করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গা ঢাকা দেয় লুৎফুর। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার সাথে আঁতাত করে প্রকাশ্যে আসে সে। প্রকাশ্যে এসেই চোরাকারবারীর সঙ্গে নিজকে জড়িয়ে ফেলেন।
স্থানীয়রা জানান জৈন্তাপুর সীমান্ত হয়ে কয়েকটি ভাগে চোরাকারবারী ব্যবসা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাদক চোরাকারবরী। এই সীমান্ত হয়ে প্রতি রাতেই বিপুল পরিমাণ মাদকের চোরাকারবারী হয়। যার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেন লুৎফুর। এই মাদক ব্যবসাকে নিরাপদ রাখতে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা গ্রহণ করতো লুৎফুর। এই পরিকল্পনার অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে বেকায়দায় ফেলা। এই পরিকল্পনায় সফলও হয়েছে লুৎফুর। পরিকল্পনা সফল করতে দরবস্ত এলাকার নীরিহ মানুষকে ব্যবহারে লুৎফুর বরাবরার সফল।
স্থানীয় সূত্র জানান, আইনশৃঙ্কলাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিতে লুৎফুরের জুড়ি নেই। এতে তিনি সফলও হয়েছেন। ২-৩ মাস পূর্বে চোরাচালান বিরোধী অভিযানে নামার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একটি টিমকে দরবস্ত বাজারে জিম্মি করে ফেলে চোরাকারবারীরা। যার নেপথ্যে ছিল লুৎফুর। এসব কারণে লুৎফুরকে বেশ একটা ঘাটাতে চায় না কেউ। সর্বশেষ হাফিজ সালেহ হত্যাকান্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন লুৎফুর।
স্থানীয়রা বলেছেন চোরকারবারী লুৎফুর উরফে চোরা লুৎফর নানান অপরাধ কর্মকান্ড করতে করতে এখন মসজিদ মাদরাসার আয়ের উৎসে হাত দিয়েছে। এর নজির কোনো অবস্থাতেই ভালো হবে না। স্থানীয়রা অবিলম্বে লুৎফুরকে গ্রেফতার করার দাবি করেছেন। অন্যথায় তার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনায় বড় ধরনের আরো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।