ঢাকা, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

হঠাৎ ৭৮বছর পর মসজিদ-মাদ্রাসার জমি অবৈধ দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ

মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ ০৬:৫৩:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

হঠাৎ ৭৮বছর পর মসজিদ-মাদ্রাসার নামে ওয়াকফকৃত প্রায় ৩ একর ৭৭ শতাংশ জমি অবৈধ দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামে এলাকাবাসীর আয়োজনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামবাসীরা শুক্রবার ২৮ জুন ২০২৪ ইং, জুমার নামাজের পর শতশত মুসল্লিদের উপস্থিতিতে মনসুর মোহাম্মদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কমসূচি পালন করা হয়।

মাদ্রাসার গভর্নিংবডির সদস্য ও মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন গভর্নিং বডির সহসভাপতি ও ইউপি সদস্য মোঃ সাতির মিয়া, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম জহির, সহ-সভাপতি মোঃ হারুন মিয়া, মাদ্রাসার গভর্নিংবডির সদস্য মোঃ আব্দুল মোহিত বাবলু-সহ অন্যরা প্রমুখ।

মানববন্ধনে মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি মোঃ সাতির মিয়া বলেন, আখদ্দছ আলীর মূলবাড়ী জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বটুলি গ্রামে। সে দীর্ঘদিন ধরে মসজিদ ও মাদরাসার নামে ওয়াকফকৃত প্রায় ৩ একর ৭৭ শতাংশ সম্পত্তি অবৈধ দখলের চেষ্টা করে আসছে। ১৯৪৬ সালে কটু মিয়া, মজর উদ্দিন ও আবেজা বিবি তাদের এ সম্পত্তি দলিল মূলে ওয়াকফ করে যান। দলিলে উল্লেখ করা হয়, এই দলিল পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন ও সংযোজন করা যাবে না। এই সম্পতির মালিকানা কখনো কেউ দাবি করতে পারবে না। কিন্তু আখদ্দছ আলী এই সম্পত্তি তার মৌরশী স্বত্ব দাবী করছে।

তিনি আরো বলেন, এটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার লোকজনদের ভয়ভীতি দেখায় আখদ্দছ আলী। এই ব্যাপারে সংসদ সদস্য কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

মানববন্ধনে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ হারুন মিয়া বলেন, ২৪ এপ্রিল আখদ্দছ আলী ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মুতাওয়াল্লির দাবি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সে নিজেকে মিথ্যা মুতাওয়াল্লি দাবি করেছে। এখন আবার সে মৌরশী স্বত্ব দাবী করছেন কিভাবে।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম জহির বলেন, আখদ্দছ আলী মসজিদ ও মাদরাসার কমিটির নামে এলাকার মানুষের কাছে গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সে বলেছে, ওয়াকফকৃত তৎকালীন মক্তব সরকার নাকি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ কোনো সরকার আজ পযর্ন্ত কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি। ওয়াকফকৃত সেই মক্তব আজ মাদরাসায় রূপান্তরিত হয়েছে। সেই মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি এডিসি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক)।

এ সময় বক্তারা আরো বলেন, আখদ্দছ আলীর বাবার বাড়ী জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে। তার মায়ের বাড়ী মসজিদ মাদরাসা ভূমি থেকে ১ কিমি দক্ষিন পূর্বে। অথচ সে যে ওয়াকফকৃত বাড়ীতে অবস্থান করছে তা মসজিদ মাদরাসা থেকে আনুমানিক ৫শ গজ পশ্চিম উত্তরে অবস্থিত। সে হাইকোর্টের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওয়াকফকৃত সম্পত্তিতে নতুন বাড়ী ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে জবরদখল করে আছে। এসময় বক্তারা ওয়াকফকৃত সম্পত্তি উদ্ধারে প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (২৭শে জুন) বিকাল ৩টার সময় কুলাউড়ার পশ্চিম মনসুরস্থ নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন আখদ্দছ আলী। তিনি বলেন, কুলাউড়ার মনসুর নিজ মৌজায় বিভিন্ন দাগে ৪২৩ শতক ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধপূর্ণ ওই ভূমির মধ্যে আমাদের দখলে ৭০ শতক রয়েছে। সেই ৭০ শতক ভূমিতে আমরা বসবাস করছি। প্রায় ৪০ বছর ধরে ওই ভূমি নিয়ে আইনি লড়াই করে যাচ্ছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। সামাজিকভাবে সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্যব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সুন্দর সমাধান চাই। সঠিক কাগজাদির ভিত্তিতে আমরা যদি ভূমির মালিক হই তাহলে আমরা মালিক। কাগজাদি সঠিক না হলে আমরা ভূমির মালিক হিসেবে দাবি করবো না বলে জানান তিনি।