ঢাকা, রবিবার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হবিগঞ্জে কৃষি বিপ্লব

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ ১১:৩৮:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন



হবিগঞ্জে হাওরে অঞ্চলে কৃষি ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জোয়াল ভাঙ্গা হাওরে কৃষি সমাবেশের মাধ্যমে নতুন বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। হাওরাঞ্চলে কৃষকের উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এবার হাওরে বোরো ছাড়া রোপণে নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার জন্য কৃষিক্ষেত্রে ব্যায় অনেক কম হবে। শ্রমিক ছাড়াই প্রতি ঘণ্টায় এক একর জমি রোপণ করা যাবে।

ফলে শীত মওসুমে ঠাণ্ডার মধ্যে কৃষকদের কষ্ট কমে যাবে। বাংলাদেশ যখন ফসলের মাঠে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চেষ্টা করছে, তখন ধান চাষ পদ্ধতি পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘সমলয়’ নামে একটি উদ্যোগ।

বৃহস্পতিবার প্রথমবারে মতো শুরু হয়, জোয়াল ভাঙা হাওরে সমলয় অনুষ্ঠানের কৃষি সমাবেশে মেশিনের মাধ্যমে বোরো ধানের ছাড়া রোপণ শুরু করেন নবীগঞ্জ কৃষি বিভাগ।

নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমের সভাপতিত্বে ও উপ সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা অজিত রঞ্জন দাশের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের পরিচালক মো. নুরে আলম সিদ্দিকী, বিশেষ অতিথি ছিলেন নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শৈলন কুমার পাল। বক্তব্য রাখেন কৃষক মো. ওমর আলী, সেলিম মিয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেছেন, সরকার বলছে, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষকের সময়, শ্রম ও ব্যয় কমাতে চায় তারা। এর মাধ্যমে চাষের খরচ কমে আসলে ধান চাষ আবার লাভজনক হয়ে উঠবে বলে আশা করছে তারা।

যখন ফসলের মাঠে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চেষ্টা করছে, তখন ধান চাষ পদ্ধতি পাল্টে দেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘সমলয়’ নামে একটি উদ্যোগ।

নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষকের সময়, শ্রম ও ব্যয় কমাতে চায় তারা। এর মাধ্যমে চাষের খরচ কমে আসলে ধান চাষ আবার লাভজনক হয়ে উঠবে বলে আশা করছে তারা।

নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম এর সাথে আলাপ করে জানা যায় যে, উক্ত প্রকল্পের আওতায় একটি “রাইস ট্র্যান্সপ্লান্টার কাম সার প্রয়োগযন্ত্র” উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত মেশিনে একই সাথে ধানের চারা রোপণ এবং সকল সার একসাথে প্রয়োগ করা যায়। কৃষক পর্যায়ে উদ্ভাবিত মেশিনটি অভিযোজনের জন্য চলমান বোরো মওসুমে প্রকল্প এলাকায়  কৃষকের মাঠে গবেষণা পরীক্ষা স্থাপন করা হয়। তারই অংশ হিসাবে জোয়াল ভাঙা হাওরে উক্ত কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দক্ষ চারজনকে মেশিন চালানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, চাষাবাদে শক্তির ব্যবহার বাড়লে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায়। তাই চাষাবাদে শক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।

এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের ফার্ম মেশিনারি এন্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মো. আনোয়ার হোসেন “রাইস ট্র্যান্সপ্লান্টার কাম সার প্রয়োগযন্ত্র”টি উদ্ভাবন করেছেন। রাইস ট্র্যান্সপ্লান্টার কাম সার প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে ধানের চারা রোপণ ও সকল সার একসাথে প্রয়োগ করা যায় বিধায় কৃষকের অর্থ ও সময় সাশ্রয় করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে রোপণের উপযোগী চারা বিশেষ পদ্ধতিতে ট্রে’র মাধ্যমে চারা উৎপাদন করতে হয়। অত্যন্ত কম খরচ ও কম সময়ে অধিক জমিতে চারা রোপণ করা যায় এবং বীজতলা তৈরির জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই যন্ত্র দিয়ে এক একর জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায় এক ঘণ্টায়। সনাতন পদ্ধতিতে এই পরিমাণ চারা রোপণ করলে সারাদিন লেগে যাবে। আর শ্রমিক ভাড়া করতে হয় ১০ থেকে ১২ জন।

একদিনের শ্রমিক খরচ এখন সাতশ থেকে আটশ টাকা। এই হিসাবে ধানের রোপণ খরচ লাগবে সাড়ে আট হাজার থেকে সাড়ে নয় হাজার টাকা। কিন্তু সমলয় এই খরচ কমিয়ে চার থেকে পাঁচ হাজারে নামাবে।

হাওরের কৃষকদের বাড়তি সুবিধা দেয়া হবে। সেখানে ৩০ শতাংশ টাকা দিলেই একটি যন্ত্র কেনা যাবে, সরকার দেবে বাকি টাকা।

আকার ভেদে যন্ত্রের দাম ১৭ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সমতলের কৃষকরা সাড়ে আট থেকে সাড়ে ১২ লাখ আর হাওরের কৃষকরা পাঁচ লাখ ১০ হাজার থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা দিয়ে যন্ত্রটা কিনতে পারবে।