ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

হুমকির মুখে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:০৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
 
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প হলো তাঁতশিল্প। উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়নকান্দী, ভবানীপুর এবং ভায়না ইউনিয়নের বাকচুয়া গ্রাম তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত।
 
জানা যায়, জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার লালন শাহ এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা বাঙ্গালী  জাতির দুইশ বছরের দ্বাসত্বের শিকল ভাঙ্গার আন্দোলনের সেই মহানায়ক বিপ্লবী বাঘাযতীন এর জনপদ ভবানীপুর, বাকচুয়া, রায়পাড়া ভাতুড়ে, ভুয়োপাড়া, বৈঠাপাড়া, নারায়নকান্দী তাঁতীদের মাঝে বর্তমানে চরম হতাশা বিরাজ করছে। একদিকে তাঁত শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন সূতা, রঙ, রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বর্তমানে তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব হুমকির মুখে রয়েছে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক তাঁত শিল্প। লোকসানে পড়ে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই।
 
উপজেলা পরিসংখ্যান তদন্ত কর্মকর্তা সুরুজ জামান জানান, সর্বশেষ ২০১৮ সালের তাঁত শুমারি হয়। এতে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত উপজেলাতে ১৪১ তাঁতি পরিবার আছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, আনুমানিক হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে ৩শ থেকে ৪শ তাঁত পরিবার রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন বাহারিু ডিজাইনে গামছা অনেক উন্নত মানের। যা চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পোড়াদাহ বাজারে বেসরকারি উদ্দ্যোগে রপ্তানি হয় বলে তাঁতীরা জানান। এক্ষেত্রে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নাই।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা বেশিরভাগ তাঁত শিল্পের উপরেই নির্ভরশীল। কিন্তু নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।
 
তাঁতীপাড়ার রহিম মন্ডল, কামাল হোসেন, বিজয় অভিযোগ করে বলেন, সূতা, রঙ, কেমিক্যালসহ তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের সকল উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিসহ উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। অপার সম্ভাবনার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি যদি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় তবেই আমরা অর্থনিতিতে ভূমিকা রাখতে পারব। তা না হলে হারিয়ে যাবে এ শিল্প।
 
১ নম্বর ভায়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন তুষার জানান, ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতশিল্প রক্ষায় সবধরনের সূতা ও কাঁচামালের দাম কমানোসহ তাঁত গবেষণা স্থাপন করতে হবে। তাঁত বস্ত্রের বাজার তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ এবং প্রান্তিক তাঁতিদের সুদমুক্ত ঋণ ব্যবস্থা করা হলে হরিণাকুণ্ডুর তাঁতিরা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য।
 
এ বিষয়ে উপজেলার ৩ নম্বর তাহেরহুদা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মনজুর রাশেদ জানান, তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্দ্যোক্তারা খুবই অস্বচ্ছল। আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই উদ্দ্যোক্তারা আমাদের এই কুঠির শিল্পকে জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
 
তাঁত শিল্পের নানা বিষয়ে তুলে ধরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা জানান, এই উপজেলাতে বেশকিছু তাঁতশিল্প আছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে। খুব শিগগিরই সরজমিনে গিয়ে এই তাঁত শিল্পটাকে পরিদর্শন করা হবে বলেও জানান তিনি।