মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে টাঙ্গাইলে পুলিশ কনস্টেবল পদে ১০০ জনের চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে একেবারে বিনা পয়সায় নয়, মাত্র ১২০ টাকায় তাদের চাকরি পেয়েছে তারা। যাচাই বাছাই শেষে শনিবার রাতে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। পুলিশ লাইন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার।
জেলা পুলিশ জানায়, কনস্টেবল নিয়োগ পাওয়ার জন্য জেলায় ৩ হাজার ৪২২ জন চাকরি প্রত্যাশী আবেদন করেন। আর এদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় দিয়েছেন ৭৩২ জন। আর লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীত হয় ২২৫ জন। এর মধ্য থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয় ১শ’ জনের নাম।
১৩ নারীর মধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের চাপাইদ গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান পিনা নেকলা। ৩ বোন ৩ ভাইয়ের মধ্যে পিনা ৫ নাম্বার। তাদের অভাবের সংসার। বাবা উধাস চিসিক দরিদ্র কৃষক। ছোট বেলা থেকেই পুলিশে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল পিনা নেকলার। চাকরি করে পরিবারের দুরবস্থা দূর করবেন। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার সেই সামর্থ্য নেই তার। কিন্তু এবার তিনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যেমে জেনেছেন চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগবে না। পুলিশের এমন প্রচারণা দেখে আবেদন করেছিলেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকেও তাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। শরীরিক ফিটনেস কিংবা মেধা দু’টিই ছিল তার। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল তার। মাত্র ১২০ টাকায় হয়ে গেলো চাকরি।
এ ব্যাপারে পিনা নেকলা বলেন, ‘আমি কখনই কল্পনাই করতেই পারিনি যে ১২০ টাকায় চাকরি পাবো। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমার বাবা একজন কৃষক। আমার এ চাকরিটি খুব দরকার ছিলো। পরিবারের সাংসারিক খরচ বহন করার জন্য আমি দুই মাস অন্য জায়গায় কাজ করেছিলাম। পরে সেটি বাদ দিয়ে পিতা-মাতাকে কাজে সহযোগিতা করে আসছি। আশা করছি এখন আমি পরিবারের হাল ধরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পারবো। একই সাথে দেশের সেবাও করতে পারবো।
বাসাইলের হাবলা গ্রামের রায়হান কবির বলেন, আমার বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। পুলিশের এ চাকরি আমার খুব দরকার ছিলো। চাকরিতে উর্ত্তীন হবে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমি দেশের এবং মানুষের সেবা করতে চাই।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পূর্ণ স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে আইজিপি মহোদয়ের উদ্যোগে সম্পূর্ণ নতুন নিয়মে কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়েছে। আমি আশাবাদি ছিলাম স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারা চাকরি পেয়েছেন। যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের অনেকেই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবিরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে। ১২০ টাকা করে ১০০ জন এ চাকরি পেয়েছে।
এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজেদুর রহমান ও গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এবং টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।