কারাগারে আটক বগুড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও নানা কারনে আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান আকন্দের নামে থানায় আরো একটি মামলা হয়েছে। চাঁদা দাবী,ভয়ভীতি দেখানো, বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্রতারনার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেছেন বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য ও অর্থ বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে বগুড়া সদর থানায় মামলাটি নথিভুক্ত (মামলা নং-৬২) করা হয় বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল ইসলাম।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকার এ্যাডওয়ার্ড পার্ক সংলগ্ন রেলওয়ের ৪ দশমিক ৪৮ একর জায়গার
উপর বগুড়া রেলওয়ে (কর্মচারী) কল্যান ট্রাষ্ট এর অনুকূলে লীজ গ্রহন করা হয়। সেখানে নির্মান করা মার্কেটের ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দ। তিনি বেআইনী ও প্রতারনামূলক ভাবে ৩ ব্যক্তির কাছে দোকান বরাদ্দের নামে ৩ লক্ষ টাকা এবং মুদ্রণপল্লী বগুড়ার পক্ষে আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে দোকান ঘর পজিশন হস্তান্তরের জন্য ১৭ কোটি টাকা গ্রহন করে। আব্দুল মান্নান আকন্দ বগুড়া ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ এর মার্কেটটির নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। মার্কেটের দোকানের পজিশন হস্তান্তরের কোন ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও বিশ্বাস ভঙ্গ ও গোপনে প্রতারণামূলক ভাবে ৩ জন ব্যক্তির কাছ থেকে ১ লক্ষ করে ৩ লক্ষ এবং অপর ১ জনের কাছ থেকে ১৭ কোটি টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও আব্দুল মান্নান আকন্দ আরো অনেকের সাথে ভুয়া ও অবৈধ চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলায় আরো বলা হয় আব্দুল মান্নান আকন্দের প্রতারণার কথা জানতে পেরে গত ১৩ সেপ্টম্বর বিকেল ৩ টায় বগুড়া রেল স্টেশন এর সামনে মান্নান আকন্দকে দেখা পেয়ে তার অপকর্মের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি
উত্তেজিত হয়ে মামলার ১নং সাক্ষী আবু জাফর মোঃ মাহমুদুন্নবী রাসেলকে বলে তোর অতিজাদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দোকান ভেঙ্গে দিয়েছে।তোদের সমিতিকে লাভের টাকা তো দিবই না বরং তুই এখন ৪ কোটি টাকা চাঁদা দিবি, না হলে আমি তোদেরকে দেখে নিব।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর বগুড়া রেলওয়ের জায়গায় নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী মার্কেটের অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ করা হয়। ওই স্থাপনা নির্মানের ঠিকাদার ছিলেন আব্দুল মান্নান আকন্দ। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে সেখানে বগুড়া রেলওয়ের বুকিং সহকারি রায়হান কবির ও অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে অভিযোগকারি মাহমুদুন্নবী রাসেলের ওপর হামলা চালানো হয়। ওই হামলার ঘটনায় মার্কেট কমিটির পরিচালক ও আহত রায়হান কবিরের বাবা হায়দার আলী বাদি হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার প্রধান আসামী ছিলেন আব্দুল মান্নান আকন্দ।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই মামলায় আব্দুল মান্নান আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক শুনানী শেষে তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) জেলা জজ আদালতে আব্দুল মান্নান আকন্দের পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে বিচারক শুনানী শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
মান্নান আকন্দ আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত পৌর নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আব্দুল মান্নান আকন্দ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই সময় তিনি বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার আগে শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মান্নান আকন্দ।