বাংলা সনের ভাদ্র-কার্তিক সময়টা কুকুরের প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে স্বভাবজাত কারণেই কুকুরগুলো ক্ষিপ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে। বিশেষ করে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে থাকে সাধারণ পথচারীরা। এসব কুকুরগুলো পথের ধারে, মোড়ে মোড়ে ওত পেতে থাকে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির লোকজন দেখলেই পথ আগলে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। আগে শহরাঞ্চলে এ মৌসুমে পৌরসভা কুকুর নিধন যজ্ঞ চালাত। আইনগত কারণে এখন আর তা হয় না। তবে এ মৌসুমে পাগলা কুকুরগুলোকে বিশেষ কায়দায় জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়। কিন্তু পোষা কুকুরগুলো নিয়ে যত আপত্তি আর বিপত্তি। কারণ সেগুলোর মালিক আছে। মালিকেরা প্রভাবশালী হলে তো আর কথাই নেই। কারণ মালিকেরা কত্ত যত্নআত্তি করে কুকুরগুলোকে মানুষ করছে। আর ওইসব আদরের কুকুরকে কেউ মারবে তো দূরের কথা মারার জন্য উদ্যতও হতে পারবে না। এখন হাল ফ্যাশনের এ যুগে অনেকেই শখের বশে বিদেশী জাতের কুকুরও পোষে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো শিকলে আটকানো থাকে। হঠাৎ মুক্ত হলে বিপদের আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। সেগুলোর প্রতি বিশেষ যত্ন নেয় মালিকেরা। কারণ প্রয়োজনমত কাউকে শায়েস্তা করতে তাদের ব্যবহার করা যায়। একবার বাধন খুলে দিলে খেউ খেউ করে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কথা যাই হোক- বাংলা প্রবাদে একটি কথা আছে। নিজের পাগল সামলিয়ে রাখ।
কিছুদিন আগে জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত ইউনিয়নের কলাবাধা, চিনাইল ও হরিদ্রাটা গ্রামে ৪ দিনের ব্যবধানে পাগলা কুকুরের কামড়ে অন্তত ১৩ ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুরুতর আহতরা জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে। আহতরা হলো- কলাবাধা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে শমসের আলী (৬৮), সুলতান মিয়ার ছেলে স্বপন মিয়া (১৭) ও তার মেয়ে রানী (১৫), সোহেল মিয়ার স্ত্রী কহিনুর (৩৫), রতন মিয়ার ছেলে সায়ান ও চিনাইল গ্রামের উজ্জল মিয়ার ছেলে ইমরান (১৪), সাকিব মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ (৫), আনোয়ার হোসেনের ছেলে ইয়াছিন (১০), হাছেন আলীর ছেলে ফজুল মিয়া (৩৮) মোফজ্জল হোসেনের ছেলে আলতাফ আলী (৩৫) এবং হরিদ্রাটা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে খুকু মনি (৩)। এছাড়া আরও আহত দুই ব্যক্তির নাম ঠিকানা বলতে পারেনি স্থানীয়রা। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে পিটিয়ে ৩টি কুকুর মেরে ফেলেছে। এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণত বছরের ভাদ্র হতে কার্তিক এ ৩ মাস পাগলা কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই এ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য স্থানীয়ভাবে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে রোগী, বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।