সাব-রেজিস্টার, কুষ্টিয়াতে সাব-রেজিস্টার একটি রহস্যজনক পদ। কথিত আছে দলিল লেখক সমিতির সাথে আতাত না করে এ পদে কোন কর্মকর্তা বেশীদিন থাকতে পারেন না। এর আগে ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে নুর মোহাম্মদ শাহ নামে একজন সাব রেজিস্ট্রার নিজ বাসভবনে হত্যার শিকার হয়। এই হত্যা কান্ডে ৪ জনের ফাঁসির রায় হলেও জনসূতি আছে আসল আসামীরা ধরা ছোয়ার বাইরে।
এছাড়া সাব রেজিস্ট্রার দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ তো নিত্যদিনের ব্যাপার। গত ২০১৯ সালে নভেম্বরে সুব্রত কুমার সিংহ ঘুষের এক লক্ষ চার হাজার চারশত টাকা ও এক কর্মচারী সহ দুদকের হাতে ধরা পড়ে। এরপর তিনি বরখাস্ত হওন। একমাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো তিনি স্বপদে বসেন। এরপর সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত
কুমার সিংহ রায় প্রায় চার মাস আগে কুষ্টিয়া থেকে বদলি হয়েছেন। এর তিন মাস পর নতুন সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদান করেন আমেনা খাতুন। তিনি যোগদানের পর একদিন অফিস করে এখন পর্যন্ত রয়েছেন ছুটিতে। যার কারণে উপজেলা সাব- রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সেই সাথে সীমাহীন ভোগান্তি
পোহাতে হচ্ছে জমির ক্রেতা-বিক্রেতা সহ সেবা
প্রার্থীদের।
এদিকে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সকল
কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় প্রতিদিন লাখ লাখ
টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সাব রেজিস্ট্রার অফিসের একজন জানান, মাঝে মধ্যে দু'একদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অন্য উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এসে দায়িত্ব পালন
করে যাচ্ছেন। কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দা রওশন আরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এসব সমস্যা সমাধান না হওয়ায় কার্যালয়ের নাজুক অবস্থা হয়েছে।
অন্যদিকে, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাব
রেজিস্ট্রারের কার্যালয় নিয়ে অভিযোগের শেষ
নেই। ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত
হয়েছে সরকারি এই কার্যালয়টি। অবিলম্বে কুষ্টিয়া
সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে
একজন দায়িত্ববান, সৎ, যোগ্য সাব-রেজিস্ট্রারকে
স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন
ভুক্তভোগীরা।
সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,
প্রায় চার মাস আগে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার
সাব-রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ দিনাজপুরে
বদলি হন। এরপর থেকে সাব-রেজিস্ট্রার না
থাকায় কার্যালয়ের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
গত এক মাস আগে এই সাব-রেজিস্ট্রার পদে
যোগদান করেন আমিনা বেগম। তিনি জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় যোগদানের পর প্রথম অফিসের দিনেই দলিল লেখকদের সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। এরপর থেকেই আমিনা বেগম অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে আছেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর
ছাড়া কার্যালয়ের কোন কাজই করা হয় না। এমন
গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তা মাসের পর মাস না
থাকায় মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে। সাব-রেজিস্ট্রার না
থাকায় সব কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে
আমাদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।
এসময় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে আরো
বলেন, অফিসের সামনে বোর্ডে যে সরকারি ফি
লেখা থাকে সেই টাকায় কেউ কাজ করতে রাজি
হন না। ঘুষ ছাড়া এই অফিসে কোন কাজ হয় না।
ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে বাড়তি টাকা দিয়ে
কাজ করতে বাধ্য হন সেবাগ্রহীতারা। তারা এই
সমস্যা সমাধানে দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা
করেন।
কুষ্টিয়া জেলা রেজিস্ট্রার সৈয়দা রওশন আরা
বলেন, প্রায় চার মাস ধরে সাব-রেজিস্ট্রার নেই।
এক মাস আগে একজন যুক্ত হয়েছে। তিনি
একদিন অফিস করার পর থেকে ছুটিতে আছেন।
সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে
মানুষ অন্যান্য উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রাররা
আমার কথা শোনেন না। মাঝে মধ্যে দুই-একদিন
অফিস চলে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি, কিন্তু
সমাধান হচ্ছে না।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা বলেন, আমরা
কোনো দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত না। নতুন সাব-
রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কোনো ঝামেলাও হয়নি
আমাদের। সুব্রত স্যার যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪
মাস ধরে নিয়মিত অফিস চলছে না। নতুন সাব-
রেজিস্ট্রার হিসেবে হাসিনা ম্যাডাম রোজার মধ্যে
মাত্র একদিন অফিস করেছেন, সেদিন ১৪টা দলিল
করেছিলেন। এখন উনিই দায়িত্বে আছেন। কিন্তু
অফিস করেন না।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়া সদর
উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার আমিনা বেগমের
মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ
করেননি।