ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ ১৪৩১

৮ নম্বর শোলকবহর ওয়ার্ড,ফুটপাত দখল ও মাদকে নাকাল

মো. এনামুল হক লিটন/সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রাম : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:২২:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়


চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ৮ নম্বর শোলকবহর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা, যানজট, ফুটপাত দখলসহ আরো কিছু সমস্যার কারণে ভোগান্তি থাকলেও তুলনামূলকভাবে এই ওয়ার্ডের উন্নয়ণ হয়েছে আশাতীত। আধিপত্য বিস্তার ও ফুটপাত দখল নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং কিশোর অপরাধ এই ওয়ার্ডের একটি বড় সমস্যা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচলাইশ মডেল থানা, চকবাজার ও খুলশী থানা এলাকায় ওয়ার্ডটির অবস্থান। ওয়ার্ডটির আয়তন ১২.০৪ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৮ নম্বর ষোলকবহর ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা ১,৩৪,০৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭২,০৯১ জন এবং মহিলা ৬১,৯৬৫ জন। মোট পরিবার ২৮,৫৫৮টি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যাংশে শুলকবহর ওয়ার্ডের অবস্থান। এর পশ্চিমে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, দক্ষিণে ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড ও ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়াড, পূর্বে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড, ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড ও ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড ওয়ার্ড এবং উত্তরে ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড ও ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড অবস্থিত।

শুলকবহর ওয়ার্ড চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৮নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের পূর্বাংশের প্রশাসনিক কার্যক্রম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চকবাজার থানার, মধ্যাংশ পাঁচলাইশ মডেল থানার এবং পশ্চিমাংশ খুলশী থানার আওতাধীন। এটি ২৮৭ নম্বর চট্টগ্রাম-১০ জাতীয় নির্বাচনী এলাকার অংশ। এ ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্য এলাকা হল: কাতালগঞ্জ, নাসিরাবাদ, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা, বাদুরতলা, শুলকবহর, মির্জারপুল, প্রবর্তক, চট্টগ্রাম মেডিকেল। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী শুলকবহর ওয়ার্ডের সাক্ষরতার হার ৭৪.৮৪%। এ ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাড়াও রয়েছে ২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১টি কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫টি কলেজ, ৯টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরেজমিনে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, একসময় ওয়ার্ডটি অবহেলিত থাকলেও বিগত ৫ বছরে ওয়ার্ডের ব্যাপক উন্নয়ণ হয়েছে। সেবা নিতে আসা ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা জানান, এক সময়ে এই ওয়ার্ডটি ছিল খুব অবহেলিত। বিগত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডটিকে অনেক আধুনিকায়ন করেছেন, কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম। এবারও তিনি পূনরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ণে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম  পূনরায় নির্বাচিত হয়ে সার্বক্ষনিক ওয়ার্ডের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তবে ওয়ার্ডের বিভিন্নস্থানে মশার উপদ্রব বেশী বলে জানিয়েছেন, কয়েক এলাকার বাসিন্দারা। ওয়ার্ডের সচিব মো. মোজাম্মেল হক জানান, মশক নিধনসহ পরিছন্নতা অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ডোর টু ডোর কার্যক্রম আমাদের ওয়ার্ডে সবসময় সক্রিয়। ওয়ার্ড ঘুরে ভাঙ্গা ও আধা কাঁচা সড়কের দেখা না মিললেও মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, মীর্জারপুল, পলিটেকনিক্যাল এলাকা, রুবি গেইট ও টেক্সটাইল গেইট এলাকাসহ আরো কয়েকটি সড়কের ফুটপাতে ভাসমান হকারের উৎপাত, যানজটের ভয়াবহ চিএ লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে বাসিন্দাদের ভোগান্তি বাড়ছে। এছাড়া যানজট, কিশোর অপরাধ ও মাদকের আগ্রাসনের কথা জানিয়েছেন, স্থানিয়দের কেউ-কেউ। তবে কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম জানান, আগে মুরাদপুর এলাকায় যানজট হতো বর্তমানে তেমন একটা যানজট হয়না। ফুটপাত দখলকারিদের উৎপাতের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে পূরো নগরীর জন্য সিটি কর্পোরেশনের মাত্র দুই জন ম্যাজিষ্ট্রেট রয়েছে। দুই জন ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে পুরো নগরী কন্ট্রোল করা সম্বব হয়না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফুটপাতে আগে যে যেভাবে পারছে বসে ব্যবসা করেছে। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। ফুটপাতকে ঘিরে বাহিনী তৈরী হয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেছেন। কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ কিছুটা থাকতে পারে। এরা নিশ্চয় কোনো না কোনো ভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রয়েছে। এজন্য রাজনীতিবীদসহ আমাদের সবাইকে সচেতন হবে। এছাড়া মাদক এই ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় বিক্রি হয়না জানিয়ে তিনি বলেন, বহিরাগত কেউ অন্য এলাকা থেকে এসে কৌশলে মাদক বেচাকেনা করতে পারে। তবে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি নিজেও মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় বিভিন্ন ধেলাধুলাসহ নানা আয়োজন করেন বলে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম জানান, ওয়ার্ডে বিগত সময়ে শতকোটি টাকা বাজেটের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরো কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান ও প্রক্রিয়াধিন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল ও ড্রেনের কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষা খাতে আমুল পরিবর্তন আনতে নিরলস কাজ করে যাওয়ার পাশাপাশি চসিক মেয়রের নের্তৃত্বে চট্টগ্রামের উন্নয়ণ ও অগ্রগতির পথে যে যাত্রা তা আরো বেগবান করতে ৮ নম্বর ষোলকবহর ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজাতে চাই উল্লেখ করে এ লক্ষ্যে তিনি ওয়ার্ডবাসীর সহযোগীতা কামনা করে বলেন, কাউন্সিলর হিসেবে আমি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকা ঘুরে-ঘুরে পরিদর্শন করেছি এবং যেখানে সমস্যা ছিল সেখানে তাৎক্ষনিকভাবে সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি ওয়ার্ডটিকে ক্লিন ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলতে এবং ঢেলে সাজাতে চান মন্তব্য করে ষোলকবশহর ওয়ার্ডকে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ, মাদক, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুন্দর, আধুনিক ও নান্দনিক ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়ার্ডবাসীর সর্বাত্নক সহয়োগীতাও কামনা করেছেন।