লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য কেনা প্রায় ২২ লাখ টাকার ডিজিটাল হাজিরা মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। মানহীন হওয়া এবং ব্যবহার না করায় অধিকাংশ মেশিনই বিকল হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে সরকারি অর্থের অপচয় স্রেফ প্রকল্পটি।
তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হলেও উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৬টি বিদ্যালয় ও ২১টি মাদরাসায় এ ব্যবস্থা নেই। মাধ্যমিক সুপারভাইজার মো. মাইনুদ্দিন জানিয়েছেন, সরকারের কোনো নির্দেশনা না থাকায় ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজিরা মেশিন কেনা ও ব্যবহার হচ্ছে না।
এদিকে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্দ পেয়েও মেশিন স্থাপন করেনি। এতে প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও অনেক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয়ভাবে ব্যবহার না হওয়ায় তারাও সেগুলো ব্যবহার করছেন না।
মঙ্গলবার ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন দেখা যায়,প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল হাজিরা মেশিন অকেজো হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রায়পুরে সরকারি ১২১টি স্কুলের শিক্ষকদের দৈনিক হাজিরা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মেশিন বসানোর নির্দেশ দেয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বার্ষিক ‘স্লিপ ফান্ডের’ খরচ থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়কে ১৮ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে হিসেবে প্রায় ২২ লাখ টাকা খরচ হয় প্রকল্পটিতে।
চর ইন্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম বলেন, স্লিপের ৪০ হাজার টাকা থেকে এ ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনার কথা ছিল। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমি সেটি অন্য কাজে ব্যবহার করেছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানান, মেশনি বসানোর জন্য একেকটি বিদ্যালয়ে প্রায় ১৭-১৮ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। বর্তমানে সব মেশিনই নষ্ট।
রায়পুর পৌরসভার স্টেশন মডেল ও উত্তর করোয়া ও লামছরিসহ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের দেয়ালে ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি দেখা গেলেও সেটি সচল ছিল না। প্রধান শিক্ষক ছিলেন প্রশিক্ষণে।
শায়েস্তানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক সামছুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমাদের ডিজিটাল হাজিরা মেশিনটি দেয়ালে বসানো। জাতীয়ভাবে ব্যবহার না করার কারণে আমরাও ব্যবহার করি না। তাই মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসতে দেরি করেন। অনেকে দুপুরে ছুটি দিয়ে দেন। এজন্য যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার হয় না। এতে সফলতার মুখ দেখতে পায়নি উদ্যোগটি।
রায়পুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ১২১টি বিদ্যালয়েই ডিজিটাল হাজিরা মেশিন রয়েছে। সবাইকে মেশিন ব্যবহারের জন্য গত মাসিক সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কতটি মেশিন সচল আর কতটি অচল তার তালিকাও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরা এখনো তা দেননি।