ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ওপর প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় হামলাকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন। হামলাকারীরা ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক শিকদারের সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে গত সোমবার (২২ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বন্দেখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মতিয়ার রহমান কুশবাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৪ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক শিকদারের সাথে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের। এরই জের ধরে গত সোমবার রাতে মতিয়ার রহমান বিশ্বাসকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় মুস্তাক শিকদারের কর্মীসমর্থকেরা।
জানা যায়, লাঙ্গলবাঁধ পুলিশ ক্যাম্প থেকে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোটরসাইকেলে ফিরছিলেন মতিয়ার রহমান। পথে বন্দেখালী ব্রীজ এলাকায় পৌঁছালে ওত পেতে থাকা দলীয় প্রতিপক্ষরা গাছ ফেলে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে হামলা চালানো হয়। এসময় তারা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। পরে ব্যক্তিগত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সমর্থকেরা অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরবর্তীতে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় তার মোটরসাইকেল চালক জাহাঙ্গীর ও আরেক মোটরসাইকেলে থাকা একটি স্কুলের অফিস সহকারী মাহফুজ এবং চৌকিদার ইমরান আহত হন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মতিয়ারের ছেলে ও শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাস বলেন, আমি জানতে পেরেছি ঝিনাইদহ-১ আসনের এমপি নায়েব আলী জোয়ার্দার, শৈলকুপা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা আরিফ রেজা মন্নু, পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক শিকদার বৈঠক করে তাদের অনুসারীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছে। হামলার পর আবার বৈঠক করে তারা হামলাকারীদের বলেছে মেরে ফেলতে পারোনি কেন, বেঁচে গেল কীভাবে। মতিয়ার না থাকলে ইউপি চেয়ারম্যান হবেন মোস্তাক শিকদার। আর শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন কাজী আশরাফুল আজম।
তিনি বলেন, হুসাইন শিকদার, চাঁদ আলী মেম্বর, সোহান, বাবুল, সাইফুল, আল আমিন, লাল্টু, মিনার, ইবাদত খান, তুষার খান, জাকির খান, আবু সাঈদ (আবু), মোমরেজ খান, শরিফুল চান, সাইদুল, হাজ্জাজ শিকদার, গফুর মণ্ডল, জিকুসহ অন্তত ৫০ জন এ হামলায় অংশ নিয়েছে।
ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ইউপি সদস্য লিয়াকত খাঁন বলেন, উপজেলাজুড়ে মতিয়ার রহমানের সুনাম আছে। ইউনিয়নজুড়ে তার জনপ্রিয়তার কমতি নেই। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মুস্তাক শিকদারের নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আমরা এর বিচার চাই।
ওই ইউনিয়নের মাজদিয়া গ্রামের বকুল হোসেন জানান, একমাস আগে মুস্তাক শিকদারকে আটকের ঘটনায় শৈলকুপা থানা ভাংচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালায় তার সমর্থকেরা। এবার তারা চেয়ারম্যানকে হত্যার মতো জঘন্য চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে পুলিশ-চেয়ারম্যান নিরাপদ নয় সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়।’
শৈলকুপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. আব্দুল হাকিম আহমেদ বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের কারফিউ উঠে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, হামলার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একজন জনপ্রতিনিধিকে হত্যার উদ্দেশ্যে মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মোস্তাক শিকদার বলেন, রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকায় এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।