সিলেটে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে জ্বালানি তেলের তীব্র সঙ্কট। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও এর সুরাহা হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী ৯ মার্চ ( বুধবার) থেকে সিলেটে আন্দোলনে নামছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। ওইদিন সকল ট্যাংক-লরি নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। পরে নেওয়া হবে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, সিলেটে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে জ্বালানি তেল সংকট। সিলেটের ফিল্ডগুলোতে উত্তোলন বন্ধ ও চট্টগ্রাম থেকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পরিবহন সমস্যায় এ সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কোনোভাবেই জ্বালানি তেলের এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না সিলেটের ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার ধরনা এবং কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েও আসছে না সমাধান।
সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এক সপ্তাহের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা। এ সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন বলে ওইদিন হুশিয়ারি দিয়েছিলেন তারা। এসময় দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো সমাধান না হওয়ায় এবার জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা আন্দোলনে নামছেন।
এদিকে, রবিবার দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি পাম্পে জ্বালানি তেল প্রায় নেই বলে জানিয়েছেন ‘সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প, সিএনজি, এলপিজি, ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’র আহবায়ক সিরাজুল হোসেন আহমদ আলমগীর। বিষয়টি জানিয়ে রবিবার এ সংশ্লিষ্ট ৫টি সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান রা হয়েছে। সংগঠনগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস্ এন্ড পেট্রোলপাম্প ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি, বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি, বাংলাদেশ এলপিজি ফিলিং স্টেশন ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি এবং সিলেট বিভাগীয় ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিলেট বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প সিএনজি এলপিজি, ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী রবিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায় বলেন, আমাদের আর কিছু করার নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আগামী ৯ মার্চ সিলেটের রাস্তায় ট্যাংক-লরি দাঁড় করিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবো। এরপরে আসবে কঠোর আন্দোলনের ডাক।
উল্লেখ্য, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য- সিলেটে গত প্রায় দেড় বছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বন্ধ। যে কারণে তেল সংকটে পড়েছেন এখানের ব্যবসায়ীরা। গত বছরের অক্টোবরে সিলেটে তেলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় বৈঠক করে আন্দোলনের হুমকি দেয়ার পরে তেলের সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো হয়। তবে পর্যাপ্ত ছিলো না এ সরবরাহ।
এরই মাঝে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আবারও সিলেটে তেলের সঙ্কট দেখা দেয়। এই সংকটের জন্য সংশ্লিষ্টরা সিলেটে উৎপাদন বন্ধ, চট্টগ্রামে তেলশূন্যতা ও রেল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ওয়াগন আসার অনিয়মকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান সরবরাহ অনুযায়ী মাত্র ৩ থেকে সােয়া ৩ লক্ষ লিটারের মতাে মতো পড়ে। সে তেল সিলেটের ৪টি ডিপাের মধ্যে ভাগ করে নেন তারা। এর জন্য কোনো কোম্পানিই তাদের গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
সিলেটের পেট্রোল পাম্পগুলােতে জ্বালানি তেল আসে চট্টগ্রাম থেকে। সিলেটে তেল সরবরাহ রেলের ওয়াগন নির্ভর। সংশ্লিষ্টদের অভিযােগ, রেল বিভাগের উদাসিনতাও সিলেটে তেলের তীব্র সঙ্কটের একটি অন্যতম কারণ।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক বছর পূর্বেও সিলেটের গ্যাস ফিল্ডসমূহের খনি থেকে উত্তোলিত কনডেনসেট থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে সিলেটের পাম্পগুলোতে সরবরাহ করা হতাে। সেসময় সিলেটে কখনাে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়নি। ১ বছরের বেশি সময় থেকে সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ পুরােপুরি বন্ধ করে সিলেটের পাম্প মালিকদেরকে ওয়াগনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি সরবরাহ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সিলেটের গ্যাসফিল্ড থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ করাকে সিলেটবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন সিলেটের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা।