অবশেষে দীর্ঘ চারমাস পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পটিয়ার এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া দলীয় সদস্য পদ ফিরে পেয়েছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির এই তিন নেতার দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছিল।
বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি চিঠিতে এই তিন নেতার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দলীয় পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ইতিপূর্বে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১ সেপ্টেম্বর দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ আপনার সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছিল।
আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার নির্দেশক্রমে আপনার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হলো। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এখন থেকে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে আপনি কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে দল আশা রাখে। ভবিষ্যতে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য আপনাকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, এস আলমের গাড়ি সরানো কান্ডে চলতি বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর এই তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।
এদিন রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছিল।
এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহবাক মো. এনামুল হক এনাম ও আহবাক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার
প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। এর আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবাক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নামে কোনও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ওই সময়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে এস আলম গ্রুপের বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার অভিযোগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতাকে শোকজ করা হয়।
সূত্র মতে, গত ২৯ আগস্ট নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউজ ফ্যাক্টরি থেকে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি রাতের আঁধারে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব গাড়ি সরাতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ দলটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ উঠে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
অভিযোগ উঠার পর গত ৩১ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এস আলম গ্রুপের গাড়ি বের করে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।
এরপর পহেলা সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির এই তিন নেতার দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছিল।
অবশেষে দীর্ঘ চারমাস পর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পটিয়ার এনামুল হক এনাম ও কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া দলীয় সদস্য পদ ফিওে পেলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান দৈনিক বায়ান্নকে বলেন, দল স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দিয়েছে।
দলের সর্বস্তরের সিনিয়র নেতা আমার কর্মী এবং জনগন দুঃসময়ে আমাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন। তাদের প্রতি এবং আমার নেতা তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক ও এনামুল হক এনামকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।