ঢাকা, শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

১০ ডিসেন্বর ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস

ভোলা প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১২:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

ডিসেন্বর ভোলা হানাদার মুক্ত হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিকলদল, সামাজিক ও সাংবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভোলা ছিল বরিশালের অধীন একটি মহকুমা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত এখানেও পাক হানাদার বাহিনী নিঃসংশ নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায়। আজ ১০ স্কৃকিত সাংগঠন বিষেশ মর্যাদায় দিবসটি পালন করবেন।

১৯৭১সালের ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার পূর্ব থেকেই ভোলায় শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষন ও প্রন্তুতি। অন্যদিকে পাকবাহিনীর সহায়তা নিয়ে রাজাকার-আলবদর বাহিনীও নিজেদের গঠন করতে শুরু করে। ৩রা মে পাকবাহিনী নদী পথে, খেয়াঘাট হয়ে ভোলায় আসে। তারা ওয়াপদা কলোনীতে ক্যাম্প তৈরি করে। সে সময় ইসলামি ছাত্র সংঘের(বর্তমান ছাত্রশিবির) কিছু তরুনদের নিয়ে গঠন করে আলবদর-আলশামস বাহিনী। ভোলায় ইলিয়াস মিয়ার নেতৃত্বে গঠন করা হয় শান্তি কমিটি। সে সময় পাকবাহিনীর দোসর আবদুল্লাহ মৌলভী ছিলেন এ অঞ্চলের রাজাকার প্রধান। ভোলার মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন,আলী আকবর বড় ভাই (প্রধান কমান্ডার), কমান্ডার গাজী জয়নাল আবেদিন, সিদ্দিকুর রহমান, মাহবুব আলম শিশুভাই, সুবেদার হযরত আলী ।

ভোলায় পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার-আলবদরদের সহায়তায় বহু ঘর-বাড়িতে হামলা চালায়। সেখানে তারা গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারী ধর্ষনের মত নানা অমানবিক ঘটনা ঘটায়।

২২ শে অক্টোবর পাকবাহিনী বেতুয়া খাল ও তেঁতুলিয়া নদী হয়ে বোরহান উদ্দিনের দেউলা গ্রামে ঢুকে ওই গ্রামে প্রচন্ড তান্ডব চালায়। পুরিয়ে দেয় গ্রামের আঁশিটিরও বেশি বাড়ি-ঘর। সুবেদার সিদ্দিকুর রহমান তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেউলা দিঘিরপাড় নামক এলাকায় পাকসেনাদের আক্রমন করেন। সারাদিন তাদের যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৬৪ জনের মত পাকসেনা নিহত হয়। বাকী কয়েকজন পাকসেনা, পালিয়ে আসে ভোলা শহরে।

টনির/ঘুইংগার হাট যুদ্ধঃ

টনি মুন্সি নামে নোয়াখালীর এক লোক ভোলা শহর থেকে প্রায় ৭ মাইল দূরে মূল সড়কের পাশেই একটি বাড়ি তৈরি করে বসবাস করত। এরপর সেখানে একটি হাট বসতে শুরু করে যার নাম হয় টনির হাট। আনসার এডজুটেন্ট আলী আকবর(বড়ভাই) একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাকসেনাদের আক্রমন করার উদ্দেশ্যে টনির হাটে বিশ্রামের জন্য অবস্থান নেয়। মোঃ টনি মুক্তিযোদ্ধাদের তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে গোপনে আবার সে খবর ভোলায় পাকসেনাদের জানায়। সেদিন ছিল ২৭ শে অক্টোবর, পাকবাহিনী ভোলা থেকে গিয়ে, টনির হাটে ও তার বাড়িতে আক্রমন চালায়,শুরু হয় প্রচন্ড যুদ্ধ। এ যুদ্ধে প্রায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাঁচ জন পাক সেনা মারা যায়। বাংলাবাজারে সম্মুখযুদ্ধে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। দৌলতখানের হাজিপুর গ্রামের গরুচোখা খালে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে ৮ ঘন্টা ব্যাপি এক ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পর ১১ জন পাক সৈন্য ও ১৩ জন রাজাকারকে আটক করে বাংলা স্কুল মাঠে আনা হয়।

চরফ্যাশন ও লালমোহনের দেবীর চরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা ভোলার পাক সেনাদের কয়েকটি ক্যাম্পে,চোরাগোপ্তা আক্রমন চালায়। শেষদিকে পাকবাহিনী, কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর পাকবাহিনী তাদের দোসর-রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতাদের নিয়ে কার্গো লঞ্চ যোগে, ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। পালাবার সময় তারা ভেদুরিয়া ঘাট ও চরসামাইয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে পড়ে। ফলে দিশেহারা হয়ে, পাকসেনারা মর্টারশেল নিক্ষেপ করতে করতে ঢাকার দিকে পালাতে থাকে। পথে তারা রাজাকার ও শান্তি কমিটির নেতাদের বিভিন্ন চরে নামিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি পাকবাহিনীর। চাঁদপুরের নিকটে গেলে, মিত্রবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে তাদের কার্গো লঞ্চের উপর গোলা নিক্ষেপ করে এবং লঞ্চটি সম্পূর্ন ডুবে যায়।

পরদিন ১০ই ডিসেম্বর ভোরে ভোলার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে, বের করে বিজয় মিছিল,হানাদার মুক্ত হয় ভোলা। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিকলদল, সামাজিক ও সাংস্কৃকিত সাংগঠন বিষেশ মর্যাদায় দিবসটি পালন করবেন।