আবারো বদলে যাচ্ছে বাজার অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে ইন্টারনেট সেবা সহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজেটের আগেই বাজার অর্থনীতির একটি পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আগের মত দিন দিন কমছে। সেটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হোক আর বিলাসজাত দ্রব্যই হোক।
বাজার অর্থনীতি নিয়ে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের সবচেয়ে বেশি ভাবনায় পড়তে হয়। বর্তমানে মাছ-মাংস, মুরগি, তেল মসলার দাম বাড়লেও পেঁয়াজ আলু শীতকালীন সবজির দাম কমেছে। এতে করে সাধারণ জনগণ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজার অর্থনীতি পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের উপরে এর প্রভাব পড়ে বেশি।
আসলে কি সারা বিশ্বের বাজারের অবস্থার সাথে আমাদের দেশের বাজার অর্থনীতি কতটুকু মিলছে। আমরা যদি বিশ্বের বাজার অর্থনীতির দিকে তাকাই তাহলে সহজেই বলতে পারি বাজার অর্থনীতির কি অবস্থা। সেখানে অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের বাজার অর্থনীতির আলোচনা করা হয়।
আমরা সেগুলো জেনেই আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করবো এমনটি প্রত্যাশা করেন গ্রাহক, উৎপাদক, বিশ্লেষক ও পরিকল্পনাকারী।
বাজার অর্থনীতি হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা পদ্ধতি যেখানে ভোক্তাদের কাছে বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং বিতরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি সরবরাহ ও চাহিদার মাধ্যমে বিক্রির মূল্য নির্ধারিত হয়। একটি দেশের বাজার অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন ধরনের বাজারের অস্তিত্ব। যা মূলধন বরাদ্দ, বিনিয়োগ, উৎপাদন বাজারজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
যেকোনো দেশের বাজারের অর্থনীতি ন্যূনতম নিয়ন্ত্রিত মুক্ত বাজার ও লাইসেজ-ফায়ার সিস্টেম থেকে শুরু করে যেখানে রাষ্ট্রীয় ভাবে জনসাধারণের পণ্য ও পরিষেবা প্রদান করা হয়। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো ব্যক্তিগত মালিকানা রক্ষা করে বাজার অর্থনীতি বা বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।
কিন্তু আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থা অনেকাংশেই সিন্ডিকেটের উপর নির্ভরশীল। এটি বাজার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বাঁধা। যেখানে ভোক্তা তার পণ্য ইচ্ছামত কিনতে পারে না। ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মত অধিক মূল্যে যেকোনো পণ্য বা দ্রব্য কিনতে ক্রেতারা বাধ্য হচ্ছে।
বাজার অর্থনীতিগুলি পরিকল্পিত অর্থনীতির সাথে বিপরীত হয়ে পড়ছে বাজার ব্যবস্থা। যেখানে বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সিদ্ধান্ত একটি সমন্বিত অর্থনীতির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পিত অর্থনীতিতে, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হল বাজারের পরিবর্তে সংস্থাগুলির মধ্যে প্রধান বরাদ্দের প্রক্রিয়া তৈরি করা।
যেখানে বাজার অর্থনীতির উৎপাদনের উপায়গুলি একটি একক সাংগঠনিক সংস্থার মালিকানাধীন ও পরিচালিত হচ্ছে তাদের ইচ্ছা মতো। জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তাই সবাই মিলে বাজার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ দরকার বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ। বিনোদকারী উৎপাদন করেই ভোক্তা বা সাধন মানুষের দিকে নজর না রেখেই ইচ্ছেমতো মূল্য আদায় করছে এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আমরা যদি বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে তুলনা করি তাহলে আরেকটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হল নির্দেশমূলক অর্থনীতি ব্যবস্থা। বা নির্দেশিত বাজার ব্যবস্থা। যেখানে সরকার সমস্ত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করে, বাজার ব্যবস্থা বা অর্থনীতির বিপরীতে। সরকার যেকোনো পণ্য ও যেকোনো ধরনের সেবার মূল্য নির্ধারণ করে এবং সেগুলো উৎপাদনের উপায় নিয়ন্ত্রণ করে। বাজার ব্যবস্থা অন্যান্য আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হল একটি মিশ্র অর্থনীতি, যার বৈশিষ্ট্য রয়েছে বাজার অর্থনীতি।
আরেকটি কমান্ড অর্থনীতি। বাজার অর্থনীতি পুঁজিবাদের সাথে আবদ্ধ, একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিগত সত্ত্বা বা মানুষ উৎপাদনের উপায়ের মালিক। ফলে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা খুব একটা সহজ হয়ে উঠে না।
উৎপাদিত পণ্য ও অত্যাধুনিক সেবা বিতরণ এবং মূল্য নির্ধারণের জন্য পুঁজিবাদের বাজার অর্থনীতিতে সরবরাহ ও চাহিদার শক্তি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিপরীতভাবে, কমান্ড বা নির্দেশমূলক অর্থনীতি সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদের সাথে আবদ্ধ আবদ্ধ থাকে। ফলে সেখানেও বাজার অর্থনীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যেখানে একাধিক উৎপাদনকারী ও যৌথ গোষ্ঠী উৎপাদনের উপায়ের মালিক হয়ে থাকে।
আমরা আশাকরি বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করবেন। মজুদদারী, কালোবাজারি ও সিন্ডিকেট ব্যবসা ভেঙ্গে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ রাখবেন। এতে করে বাজার ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন আসবে। বাজার ব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করবেন সাধারণ মানুষ।
লেখক: অধ্যাপক আবু সালে মো. ফাত্তাহ
কবি, লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক