ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কলকাতায় বাংলাদেশিদের অভাবে ব্যবসায় মন্দা: ধুঁকছে ‘মিনি বাংলাদেশ’

অনিক কর্মকার | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৯:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

কলকাতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকা এক সময় বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য জমজমাট ছিল। প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসতেন এখানকার হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং দোকানগুলোতে। কিন্তু সময় বদলেছে। বাংলাদেশিদের উপস্থিতি এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেমে এসেছে এই এলাকার ব্যবসায়িক মন্দা।

ব্যবসার ভাটা: আশ্রয়হীন ব্যবসায়ীরা

মার্কুইস স্ট্রিট, হগ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলিন স্ট্রিট এবং কেওয়াইডি স্ট্রিটের মতো জায়গাগুলো, যেগুলো একসময় বাংলাদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত, এখন প্রায় জনশূন্য। এখানে থাকা রেস্টুরেন্ট, হোটেল, এবং দোকানগুলোতে কোনো ক্রেতার দেখা মিলছে না।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান বলেন, “আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি থমকে গেছে। বাংলাদেশি পর্যটকেরাই ছিল আমাদের জীবিকার প্রধান উৎস। তারা না থাকায় আমরা প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছি।”

হোটেল ব্যবসায়ী পিন্টু বসাক জানালেন, “দুই দশক ধরে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আমাদের হোটেল সাজিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখন তারা আর আসছেন না। হোটেল রুম বুকিং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে গেছে। আমরা টিকে থাকার লড়াই করছি।”

দুই দেশের সম্পর্কের প্রতীক আজ বিপর্যস্ত

বাংলাদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট মালিক এনসি ভৌমিক এই পরিবর্তনে আবেগাপ্লুত। “এই ব্যবসা শুধু ব্যবসা নয়, এটি দুই দেশের সম্পর্কের প্রতীক ছিল। এখন সেই সম্পর্ক ভেঙে পড়ছে বলে মনে হয়। আমরা যত চেষ্টা করছি, এই ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।”

অর্থনৈতিক বিপর্যয়: চরম সঙ্কটে ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশি পর্যটকদের উপস্থিতি হ্রাস পাওয়ার ফলে যে আর্থিক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার চিত্র ভয়াবহ। রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের অর্ডার নেই, হোটেল রুম খালি পড়ে আছে, দোকানে ক্রেতা নেই। এক সময় লাভজনক ব্যবসাগুলো এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে। অনেক ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত।

পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

পরিস্থিতি সামাল দিতে কলকাতার ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশি পর্যটকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে।

তারা বার্তা দিতে চান, “কলকাতা বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ। এখানে এসে তারা আগের মতোই স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারবেন।”

আশার আলো কতটা বাস্তব?

তবে আশঙ্কা রয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানেন না, বর্তমান পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হবে।

“বাংলাদেশি পর্যটকদের ফেরাতে না পারলে আমাদের অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হব,” বললেন এক ব্যবসায়ী।

কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ এলাকা এক কঠিন সময় পার করছে। যদি দ্রুত কোনো সমাধান না আসে, তবে এই এলাকার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাগুলো একে একে হারিয়ে যেতে পারে। দুই দেশের মানুষের সম্পর্কের এই সেতুবন্ধন রক্ষা করার দায়িত্ব এখন উভয় পক্ষের।

 

বায়ান্ন/এএস