ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় কর্মরত ২ এনজিও প্রায় ৭ হাজার ভিজিডি সুবিধাভোগীকে প্রশিক্ষণের নামে সাড়ে ২৮ লক্ষ টাকা হরিলুট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। । উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চুক্তিবদ্ধ অফিস মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং কাগজে কলমে দেখানো প্রশিক্ষণ ভেন্যূর কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেউই কিছু জানেন না। কাগজে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলায় ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের দু‘ এনজিওর মোট ৬হাজার ৭০২ জন ভিজিডি সুবিধাভোগী সদস্যদের প্রশিক্ষণের ভাতা হিসাবে ৪২৫টাকা হারে মোট ২৮লাখ ৪৮হাজার ৩৫০ টাকা লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সকল এনজিও কাগজে কলমে প্রশিক্ষণের নাম থাকলেও সরেজমিনে কোন ভ্যানু বা কাউকে পাওয়া যায়না। এমনকি চুক্তিবদ্ধ অফিস মহিলা বিষয়ক দপ্তরও জানেনা প্রশিক্ষণের কথা।
সরেজমিনে গেলে সুবিধাবঞ্চিতরা জানান ২০২০-২১ অর্থ বছরে আরা(অজঅ) ৯২১ জন ও দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি ২৮শত নাম অর্ন্তভূক্ত ছিল। চলতি অর্থ বছর ২১-২২ সালে সাতক্ষিরার এনজিও “আরা” চরফ্যাশনে ভিজিডির সদস্যদের প্রশিক্ষণের তালিকা ভূক্ত হয়নি। ২৯৮১ নামের তালিকাভূক্ত হয়েছেন লালমোহন উপজেলার দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি। ১২লাখ ৬৬হাজার ৯২৫টাকা লোপাট করেছেন বলে ভূক্তভূগীদের অভিযোগ।
চলতি অর্থ বছরে দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির ইউনিয়ন বরাদ্দকৃত কার্ডের সংখ্যা ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নে ১৫৭, আসলামপুর ২৩৬,চরমাদ্রাজ ২০৪, জিন্নাগড় ২২৭,আমিনাবাদ ১৬৫, নীলকমল ১৬৯,নুরাবাদ ১২৮, চরকলমী ১৮১, চরমানিকা ১৫১,হাজারীগঞ্জ ১৫৩, রসুলপুর ১৫৭,চরকুকরী মুকরি ১৩২, এওয়াজপুর ১৪৬, জাহানপুর ১২৩,নজরুল নগর ১২৭, মুজিব নগর ১২১,আবুবক্করপুর ১২৯, আবদুল্লাহপুর ১৪০, ঢালচর ১০৯ আহম্মদপুর ৭৬জন ভিজিডি সুবিধাভোগী রয়েছে।
কোস্ট ট্রাস্ট নামক একটি স্থাণীয় এনজিওর প্রধান কার্যালয়ে প্রশিক্ষণের তালিকাভূক্ত থাকলেও ওই ভ্যানুতে প্রশিক্ষণের নির্ধারিত তারিখে ১০-১২টা পর্যন্ত উক্ত এনজিওর কোন প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষণার্থী পাওয়া যায়নি। এ সময় ভ্যানুটিতে ছিল তালাবদ্ধ থাকায় কোস্ট ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম অফিসার খোকন চন্দ্র শীলর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের কাছে কেউ ভেন্যু না চাওয়ার কারনে তালা বদ্ধ রয়েছে এছাড়া কোন এনজিও তাদের প্রশিক্ষণ হল ভেন্যু হিসেবে দেখিয়েছে এমন কোন কাগজ তারা পায়নি।
২১ নভেম্বর নুরাবাদ ইউনিয়নের আঃ আলী মাষ্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেন্যু উল্লেখ থাকলেও আঃ আলী মাষ্টার নামে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফরিদাবাদ সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয় রয়েছে আঃ আলী মাষ্টার বাড়ীর পুরানো বাড়ীর দরজায়। ওই বাড়ীর দরজায় ৩-৫টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণের ভ্যানু দেখানো হলেও ওই খানেও কোন প্রশিক্ষণই হয়নি। ওই বাড়ীর বাসিন্দা ও আহম্মদপুর ইউপির সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, এখানে কোন এনজিওর প্রশিক্ষণ হয়নি। এ বিষয়ে যাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটি এনজিও‘র কোন চুক্তি নামা পাননি তিনি। তবে ২৯৮১ ভিজিডি সদস্যদের নাম পেয়েছে তা আমরা জানি। আমাদেরকে সিডিউল দিয়েছে। প্রশিক্ষণ হয় কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানেন না বলে স্বদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি কে জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন,এই প্রশিক্ষণের বিষয় আমি জানি না তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
‘দ্বীপ উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো ইউনুছ মিয়া, ভিজিডির সিডিউল মোতাবেক প্রশিক্ষণ হয়নি এমন অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ হয়নি তা ঠিক না। তবে আমার কর্মীরা প্রশিক্ষণ না করে থাকলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব।
