স্বাধীনচেতা হলে অনেক বাধা আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশকে ভালোবেসে শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যারা পথ চলে, তাদের পথ চলা কখনও সহজ হয় না। অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। চলার পথ যত অন্ধকারাচ্ছন্নই হোক না কেন, যত বন্ধুর হোক না কেন, যতই কণ্টকাকীর্ণ হোক; সেখানে আমরা থেমে থাকবো না। অন্তত আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, থেমে থাকবো না।’
রবিবার (২ জানুয়ারি) সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কতৃর্ক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ উত্তোরণের স্বীকৃতি প্রদান আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা জানান। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অথনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চলার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, যত রক্তক্ষরণ হোক; সব পদদলিত করে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাব এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা, যোগ করেন তিনি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বিখ্যাত কবি রবার্ট ফ্রস্ট’র ‘স্টপিং বাই উডস অন এ স্নোয়ি ইভিনিং’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, আমি কবির ভাষায় বলতে চাই- ‘উডস আর লাভলি ডার্ক অ্যান্ড ডিপ, বাট আই হ্যাভ প্রমিসেস টু কিপ, অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ, অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি অনেক বুলেট, বোমা, গ্রেনেড আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আমি কখনো সেগুলো নিয়ে পরোয়া করি না। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। আর যারা আমার সহযোগী, আমার সঙ্গে আছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কেননা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তারা সকলে কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সকল সহযোগী সংগঠন এবং বাংলদেশের সকল জনগণকে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের এ জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তিকে টেকসই করতে সরকার উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি ‘জাতীয় সরল উত্তরণ কৌশল (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি)’ প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জাতীয় দলিলে উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব ধরনের দিক-নির্দেশনাসহ কার্যকর কৌশল থাকতে হবে।’
সম্যক গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে একটি প্রমাণ-নির্ভর সময়োপযোগী কার্যকর কৌশল প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবোই। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তোরণের স্বীকৃতি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই লক্ষ্য অর্জনে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সেভাবেই তাদের তৈরি করতে চাই, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন এই চলার গতিটা ধরে রাখতে পারে। সেই লক্ষ্যটা সামনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা, যাতে তারা এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে পারে। কেননা তারুণ্যের শক্তিকে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে আমরা চলবো।
শেখ হাসিনা বলেন, চিরদিন কেউ বাঁচে না। কিন্তু যেই কাজ আমরা করে গেলাম সেই গতি যেন হারিয়ে না যায়, চলার গতি যেন অব্যাহত থাকে, বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায় সেটাই আমরা চাই।
সরকার প্রধান বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে আমার এটাই আমাদের দাবি, অন্তত আমি তাদের এটুকু আহ্বান করবো- দেশকে ভালোবাসবে, মানুষকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। সেখানেই শান্তি, সেখানেই অগ্রগতি, সেখানেই নিয়তি, সেখানেই স্বস্তি। আর বাংলাদেশের এই চলা অব্যাহত থাকবে।