ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬শে পৌষ ১৪৩১

ছিনতাই প্রতিরোধে মোবাইল-মানিব্যাগ নিজ দায়িত্বে রাখার অনুরোধ ডিএমপির

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : বুধবার ৮ জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:৩৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

ছিনতাই প্রতিরোধে নগরবাসীকে মোবাইল-মানিব্যাগ নিজ দায়িত্বে রেখে পুলিশকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। 

বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভায় মহানগরবাসীর কাছে এই অনুরোধ করেন তিনি। 

আমরা আপনাদের সাহায্য করবো এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু ব্যক্তিগত ব্যাগ ও মোবাইল নিজে একটু নিরাপদে রাখার চেষ্টা করবেন। এ কাজটির মাধ্যমে আপনি আমাদের সহযোগিতা করতে পারবেন। আমরা ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি। দিনে ও রাতে পেট্রোল সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ডিবিকেও এ কাজে লিপ্ত করেছি। গত এক সপ্তাহের তথ্য অনুযায়ী আগের তুলনায় ছিনতাই কমেছে। আশা করছি এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবো বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। 

ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই মাদকাসক্ত অল্প বয়সের ছেলে মন্তব্য করে শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ১৫ থেকে ২২ বছরের ছেলেরা মাদকে আসক্ত হয়ে এই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ বাসে বা প্রাইভেটকারে বসে কথা বলার সময় ওরা মোবাইল নিয়ে দৌড় দেয়। তখন তাদের হাতেনাতে ধরা অত্যন্ত কঠিন। কারণ আমাদের অফিসারদের কাছে বড় অস্ত্র থাকে, বুট ও ইউনিফর্ম পরা থাকে। আর ছিনতাইকারী থাকে খালি পায়ে বা কেডস পরা। তার সঙ্গে দৌড়ে পারাটা অনেক কঠিন।

ঢাকায় দুই-আড়াই কোটি লোকের বসবাস উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এখানে হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যাই বেশি। এছাড়া বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া নানা সামাজিক সমস্যা প্রকারান্তরে পুলিশের ঘাড়েই এসে পড়ে। ইদানীং বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকেরা ছোটখাট দাবি আদায়ে রাজপথকেই বেছে নেন। সবাই মনে করেন রাজপথ দখলে নিলে দাবি-দাওয়া দ্রুত আদায় হবে বা সমস্যার সমাধান হবে। যার ফলে ঢাকার ভঙ্গুর ট্রাফিক আরও নাজুক অবস্থায় চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে রাস্তায় থাকতে হয়।

ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে মিরপুর-এয়ারপোর্ট ও রামপুরা রোড—তিনটি সড়কের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এর একটি রোড বন্ধ হলে পুরো শহর অচল হয়ে যায়। আমরা এ সমস্যার প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছি। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, দাবি আদায়ে খোলা মাঠ, অডিটোরিয়াম, সভাস্থল বেছে নিন। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সেখানে ডেকে টেবিলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। 

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, বিগত ১৫ বছর ডিএমপি সদস্যরা যে আচরণ করেছে, সেই আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে চাই। কিন্তু এ জন্য সময়ের প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ছাড়া হঠাৎ করে ৪০ হাজার সদস্যকে পরিবর্তন সম্ভব না। তাই আমরা ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু করেছি। কোথায় কী পরিমাণ বল প্রয়োগের প্রয়োজন সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখছি। অচিরেই আপনারা সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন যোগ করেন তিনি। 

৫ আগস্টের পরে ডিএমপির মনোবল ভেঙে পড়ে এবং বিগত পাঁচ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে তা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলছেন, পুলিশ যদি নিষ্ক্রিয় থাকে তার ফলাফল কি হয় ৫ আগস্টের পরে ঢাকাবাসী মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। পুলিশ আপনাদের লাগবে। আমাদের অনেক দুর্বলতা আছে, সেগুলা থেকে বের হয়ে আমরা আপনাদের সেবা দেব বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।  

আমার সহকর্মীদের অনেক ভুল ভ্রান্তি হয়ে যায় স্বীকার করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সেই ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ। সেসব সংশোধন করে যেন ঢাকাবাসীকে সেবা দিতে পারি তাই কামনা করছি। সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে আমরা অবশ্যই ভালো থাকবো যোগ করেন তিনি।

 

বায়ান্ন/এসএ