বর্তমানে বিশ্ব বদলে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ( Artificial Intelligence) প্রযুক্তির প্রসার যেভাবে ঘটছে তাতে বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির মহাবিশ্ব। উদ্ভাবনীর সাফল্য। মানব জীবন পরিবর্তনের এক চালিকাশক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বিজ্ঞানের এমন ব্যবহার, যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা, শেখার ক্ষমতা, দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানের মতো বিষয় বা গুণাবলিকে কম্পিউটার বা মেশিনের মাধ্যমে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। এটি মানব সৃষ্টি এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। যা তথ্য বিশ্লেষণ করা, ধারণা তৈরি ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ সম্পাদনা করতে সক্ষম।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিহাস থেকে জানা যায় জন ম্যাকার্থিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলে মনে করা হয়। জন ম্যাকার্থি একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছিলেন বলেও জানা গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটি এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী তৈরি করেছিলেন। তিনি অ্যালান টুরিং, মারভিন মিনস্কি, অ্যালেন নেওয়েল ও হারবার্ট এ সাইমনের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলে জানা যায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির বিশ্বের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশও এই প্রযুক্তি বিপ্লবের অংশীদার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবককে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রশিক্ষণ দিয়ে মানব সম্পদের রূপান্তর করে বিপ্লব ঘটনো সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পৃথিবীতে মানব সম্পদের বা মানুষের কাজের অভাব পড়বে, মানুষ বেকার হবে, এটি সম্পূর্ণরূপে সঠিক নয়। উদ্ভাবনী শক্তি ও দক্ষ মানবসম্পদ বদলে দিতে পারে একটি দেশ ও জাতিকে। মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় জরুরী হয়ে পড়েছে।
আমাদের দেশের প্রতিটি সেক্টরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ছোঁয়া লেগেছে। শিক্ষা স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ও গবেষণায় এই খাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অটোমেশন এর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে নতুন দিগন্তর নতুন করা সম্ভব। নতুন কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করে বাংলাদেশের সৃজনশীল খাতকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব।
আমাদের দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভার্চুয়াল ল্যাব, নভোথিয়েটার, ডেটা সাইন্টিস্ট, অ্যামিনেশন, ভিজুয়াল ইফেক্ট শিল্প অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনছে। টেক্সট টু স্পিচ প্রযুক্তি, ডেটা সাইন্টিস্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেশিন লার্নিং বদলে দিচ্ছে সবকিছু।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এখন আমাদের দেশেও হয়ে উঠেছে একটি একাডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্র। যেখানে স্বল্পপরিসরে পড়ানো হচ্ছে কীভাবে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় যা বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করবে। কম্পিউটারকে মিমিকস কগনেটিক এককে আনা হয়, যাতে করে কম্পিউটার মানুষের মতো ভাবতে পারে। কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ এবং সমস্যার সমাধান সহজেই করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ফ্যাকাল্টিতে এই বিষয়ে বেশি করে পড়ানো উচিত।
সারাবিশ্বের মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা পাচ্ছে। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে আধুনিক কম্পিউটার ও ডিভাইস ব্যবহারকারী এই সুবিধার আওতায় এসেছে। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির এই মহাবিশ্ব। তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক অভাবনীয় বিশ্ব।
লেখক: অধ্যাপক আবু সালে মো. ফাত্তাহ
সভাপতি, রাজশাহী শিক্ষা গবেষনা পরিষদ