টাঙ্গাইলের বাসাইলে একটি সেতু নির্মাণের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা পড়েছে। মূল সড়কের মাটি কেটে ডাইভার্সনে ফেলা। ডাইভার্সনে নির্ধারিত পরিমাণ উচ্চতা ও ইটের সলিং না করা। ডাইভার্সনে ব্যবহার করা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ভাড়া পরিশোধ না করাসহ নানা অভিযোগ পথচারী এবং এলাকাবাসীর। উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ছনকাপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুটির ডাইভার্সনের পুরো কাজ শেষ না করে সেতুর কাজ শুরু করাকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল জলিল সরকারের (জেভি) বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন তারা ।
বাসাইল উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের বন্যার পানির তোড়ে ছনকাপাড়ার এই সেতুটি ভেঙ্গে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ওই স্থানে বিশ্বব্যাংক এবং জিওবি’র অর্থায়নে ৩ কোটি ৭২ লক্ষ ২ হাজার ৯৬৩ টাকা ব্যয়ে ৩৫ মিটারের একটি সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। সেতু নির্মাণের আগে ১০০ মিটার ডাইভার্সন নির্মাণের জন্যও প্রকল্প ধরা হয়েছে। প্রকল্পে ডাইভার্সনের নিচে ৩০ ফুট এবং উপরে ১২ ফুট প্রস্থ ধরা হয়েছে। ডাইভার্সনের কাজে ৪০ হাজার ঘনফুট মাটি বাবদ ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ২৫৯ টাকা, ১০ ফুট প্রস্থ ও ৩৩০ ফুট দীর্ঘ সলিং বাবদ ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৮৭৮ টাকা এবং এইচবিবি বাবদ ২ লক্ষ ১৮ হাজার ২৮৩ টাকা বরাদ্দ ধরা রয়েছে। ধাপে ধাপে এসব টাকা বরাদ্দ ধরা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডাইভার্সনের কাজ বাদ রেখে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে। ফলে ওই সড়কে যাতায়াতকারী ১০-১২টি গ্রামের লোকজনের ডাইভার্সনের কাঁদামাটি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ভোগান্তিতে রয়েছে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও।
ব্যাটারী চালিত অটোচালক রাজীব মিয়া বলেন, রাস্তায় তো মাটিই ফেলেনি। ইটের রাস্তা করবে বলে শুনেছিলাম। এখন তো দেখি মাটির রাস্তাই বানাবে না।
কাঞ্চনপুর পশ্চিম পাড়ার জাকির মিয়া বলেন, রাস্তার মাটি কেটে ডাইভার্সন রোডে ফেলা হয়েছে। ইটের সলিং এর খবর নেই। কোন রকমে ৪০-৫০ হাজার টাকার মাটি ফেলায় নিচু ডাইভার্সনের অধিকাংশ কাঁদায় পূর্ণ। প্রকৌশল অফিস, সাংবাদিকদের এসব অভিযোগ জানানোর কথা বললে ঠিকাদার বাজে ভাষা ব্যবহার করে গালিগালাজ করে।
স্থানীয় কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন আলাল বলেন, এমপি মহোদয় উদ্বোধন করে যাবার পরই বাতাসে নামফলক ভেঙ্গে পড়ে গেছে। ঠিকাদারের কাজের নয়ছয়ের এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?
ডাইভার্সনে ব্যবহার করা ছনকাপাড়ার দরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী কৃষক মুস্তাকিন মিয়া বলেন ,আমার এইটুকুই কৃষি জমিতে বোরো আবাদ করে সারা বছরের খাবার জোটে। রাস্তা নেবার জন্য বোরো আবাদ করতে পারি নাই। এই জমির উপর দিয়ে রাস্তা নেবার সময় ঠিকাদার কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলো। এখন বিভিন্ন টালবাহানার কথা বলে।
কোন প্রকার বালি না ফেলা হলেও বালু ফেলেছে এমনটা বলে বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী আঃ জলিল বলেন, আজ কালের ভেতরই ডাইভার্সনের কাজ শুরু করা হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আব্দুল জলিল সরকার (জেভি) বলেন, নিয়মনীতি মেনে সব কাজ করা যায় না। ডাইভার্সন ধরা আছে ১শ’ত মিটার, সেখানে ১শ’ত ৮০ মিটার করাতে কাজটি করতে বিলম্ব হচ্ছে। হয়রানী পেরেশানী কইরেন না। যত ঝামেলা করবেন কাজ করতে ততই দেরি হবে।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, নিম্নমানের কাজ করার সুযোগ নেই। নিম্নমানের কাজ করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।