সবাইকে পরমত ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১৬ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশটা যেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে ওঠে, আমরা সেই প্রচেষ্টাই চালাব। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে, দেশের মানুষের উন্নতি হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম যেন নিশ্চিতভাবে পালন করতে পারে, ধর্মীয় স্বাধীনতা যেন নিশ্চিত থাকে, যেটা আমাদের ইসলামের শিক্ষা, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি, সেটাই আমরা করতে চাই। ’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের সমাজে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে- যেমন মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, নারীর প্রতি সহিংসতা, গৃহকর্মী, অধীনস্তদের নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল, দুর্নীতি, ইত্যাদি দূরীকরণে ইমাম ও খতিবদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা যখন মসজিদে কোনো বয়ান দেন বা জুমার নামাজে খুতবা পড়েন, তখন এসব বিষয় থেকে বিরত থাকার বিষয়গুলো আপনারা মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। সঠিক মানবিক দিকগুলো যাতে উঠে আসে, বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক- এগুলো আমাদের সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে যেন প্রত্যেকের ছেলেমেয়েরা বিরত থাকে, ধর্মের প্রতি কোনো অসম্মান নয়, ইসলামের বদনাম যাতে না হয়, সেই বিষয়ে মানুষ যেন সচেতন হয়। নিজেদের সন্তান-সন্ততি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা, আপনারা খেয়াল রাখবেন ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সঙ্গে যাতে কোনোভাবে সম্পৃক্ত না হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে আপনারা বিশেষ অবদান রাখতে পারেন। ’
সুন্দর সমাজ গড়তে সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি, আমাদের ধর্মের সম্মানটা যেন আরও উন্নত হয়। সেদিকে খেয়াল রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অন্ধকার, কুশিক্ষা, অশিক্ষা, বিভেদ, হানাহানি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দূর করে যেন সমাজটাকে সুন্দরভাবে আমরা গড়ে তুলতে পারি। ’
সত্যিকারের ইসলামের জ্ঞান চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্মাণকাজ চলছে আরও ২৮৬টির। এর মধ্যে এ মাসে ৫০টি উদ্বোধন শেষে ফেব্রুয়ারিতে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে।
সরকারি অর্থায়নে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। শুধু নামাজ আদায় নয়, মসজিদ হবে গবেষণা ইসলামি সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজশাহী ও শরীয়তপুর জেলা সদর মসজিদ এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে মডেল মসজিদের ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।