বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠল এতিম, ছিন্নমূল ও বেদে সম্প্রদায়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা এই উৎসবের আয়োজন করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে মুগ্ধ সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। ভিন্নরকম এই আনন্দ-উৎসবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নড়াইলের চিত্রা নদীর পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত সুবিশাল হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি ডিসি পার্কে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ভিন্নরকম বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন। দিবসটি উপলক্ষে ছিন্নমূল, এতিম ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের অংশগ্রহণে কেককাটা, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, খেলাধূলা, বিনোদন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৪৫ শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে মুগ্ধ সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।
নড়াইল শহরের বিয়াম স্কুলের পাশে সুবিধাবঞ্চিত শিশু প্রিয়াংকা দাস পিকিং ও নন্দিতা দাস জানায়, আগে কখনো এ ধরণের আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠিনি। ট্রেন, নাগরদোলা, চরকা, নৌকাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়তে পেরে খুব খুশি হয়েছি।
এতিমখানার শিশু তারেক ও মাসুম বিল্লাহ জানায়, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের ভাইয়েরা আমাদের অনেক আনন্দ দিয়েছেন। দিনভর ঘোরাঘুরি করেছি। দুপুরে ভালো মানের খাবার খেয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যার, পৌর মেয়রসহ অনেকে নিজ হাতে আমাদেরকে খাবার তুলে দিয়েছেন। এছাড়া আমরা বিভিন্ন প্রকার খেলায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কার পেয়েছি।
স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভিন্নরকম এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে সংগঠনের উপদেষ্টা মোঃ ফয়সাল মুস্তারী বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের সৃজনশীল এই উদ্যোগ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়ুক এই আমাদের প্রত্যাশা। ভবিষ্যতেও তারা ভালো কাজ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছি।
নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন সবসময় ভালো কাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাজ দেখে আমরা মুগ্ধ। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে শিশুদের নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় তাদের ধন্যবাদ জানাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন নামটি যেমন চমৎকার, তেমনি তাদের কার্মকান্ডও অনেক সৃজনশীল। তারা সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতধারায় এগিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কাজ করে যাচ্ছে। স্বপ্নের খোঁজে’র কাজকে সমর্থন করে নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজাও তাদের উবুদ্ধ করে থাকেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবির, এনডিসি আসিফ উদ্দিন মিয়া, পৌর কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু, ইপি রানী অধিকারী, বিএম নজরুল ইসলাম, যুব মহিলা লীগের আহবায়ক নাসিমা রহমান পলি, ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মোঃ ফয়সাল মুস্তারী, সভাপতি মির্জা গালিব সতেজ, সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহ পরাণসহ অনেকে।
স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ বিজয়ী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরুতে থেকেই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাঁচ বছর যাবত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে এ ধরণের ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ‘সুখ স্বপ্নের সন্ধানে কাজ করব মোরা একই বন্ধনে’-এ স্লোগানে ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়।
সংগঠনের সদস্যরা জানান, পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পারিবারিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতা ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষা ও জীবনযাত্রা মানউন্নয়ন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছর ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ জয়লাভ করে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন। ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর বিকেলে সাভারের শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান করেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা ও সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়।
এছাড়া করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বাজার, গরিব কৃষকের ধান কর্তন, চিকিৎসাসেবা, হাসপাতাল ও এতিমখানায় ইফতার বিতরণ, ঈদে ছিন্নমূল ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক উপহার দেয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। সংগঠনে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন। এদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।