সিলেটে বৃহস্পতিবার বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বিপন্ন বন্যপ্রাণীর আবাস লাঠিটিলায় সাফারী পার্ক নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আয়োজন করে মানববন্ধন কর্মসূচি। বিকাল চারটায় টিলাগড় ইকো পার্কের সম্মুখে প্রায় ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন চলে।
এতে অংশ নেন পরিবেশ ও প্রাণীপ্রেমি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। কর্মসুচি থেকে লাঠিটিলা সাফারী পার্ক নির্মাণ বন্ধের দাবি জানানো হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেদওয়ান এর সভাপতিত্বে সভায় মূল বক্তব্য রাখেন বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুল করিম কিম।
সভায় বক্তারা বলেন, একটি সংরক্ষিত বন সংরক্ষনের নামে সাফারি পার্ক বানানো হলে বনের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। কাজেই লাঠিটিলা বনে যে সাফারী পার্কের প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে তা বিপন্ন সিলেটের বনাঞ্চলের অস্তিত্ব বিলীন করবে। কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মহলের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই বন বিভাগ এই প্রকল্পবাজী করছে।
বক্তারা আরো বলেন, এবারের বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে '''Recovering key species for ecosystem restoration''। এর বাংলা করা হয়েছে "বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করি, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসি'। সাফারি পার্ক করে লাঠিটিলার বিপন্ন হাতি রক্ষা পাবে? এক বছরে বাংলাদেশে ৩৪টি হাতি হত্যা হয়েছে। হাতি আকারে বিশাল। তাই লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ছোট ছোট প্রাণীগুলো এই দেশ থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে। সে তথ্য অনেক ক্ষেত্রে গোপন থাকছে।
বাংলাদেশে মহাবিপন্ন, বিপন্ন ও সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকা দির্ঘ হচ্ছে। গত দুই বছরে বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে এসে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় শতাধিক বিপন্ন বন্যপ্রাণী। বন বিভাগের হিসাবে উনিশ মাসে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক বন্য প্রাণী। এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রাকৃতিক বনকে পর্যটন কেন্দ্র বানানো বিশ্ব বন্যপ্রানী দিবস পালনের প্রতিপাদ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ভাষাসৈনিক মতিন উদদীন যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা সিলেটের যুগ্ম-সম্পাদক ছামির মাহমুদ, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, ঐতিহ্য ও পরিবেশ সংরক্ষণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি জাকির হোসেন সোহেল, সেইভ আওয়ার ষ্ট্রিট এনিমেল সিলেট (সোসাস) এর সংগঠক অ্যাডভোকেট অরুপ শ্যাম বাপ্পি, চিত্রশিল্পি সত্যজিৎ চক্রবর্তী, নাগরিক সংগঠক বিনয় ভদ্র, বাঁচাও হাওর আন্দোলন বিশ্বনাথের আহবায়ক সাজিদুর রহমান সোহেল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিষয়ক সংগঠক প্রাধিকার-এর সভাপতি তাজুল ইসলাম, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন এক্সপ্লোর সোসাইটির আব্দুল আকিল, শিশু সংগঠন উষার সভাপতি তমিস্রা তিথি প্রমুখ।