ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয় আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোঁদন করছেন, উঠ-বস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে আনা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র না উন্নয়ন—এ কথা আসতে পারে না। কেননা আমাদের অভিজ্ঞতা খুব বিচিত্র। আমরা আইয়ুবের আমল, ইয়াহিয়ার আমল, জিয়ার আমল, জেনারেল এরশাদের আমল, খালেদা জিয়ার আমলও দেখেছি। আমি যখন আমেরিকায় প্রথম বার যাই তখন আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। আমি তাকে একটা কথাই বলেছিলাম যে, আমরা একটা মনুমেন্ট দেখে আসলাম, সেখানে লেখা আছে—গর্ভরমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। আর আমি একটা দেশ থেকে এসেছি, সে দেশটা হচ্ছে গর্ভরমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের ওই আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায় তাহলে কি আপনাদের গণতন্ত্রের চর্চা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিক্টেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন, আমি এই প্রশ্ন করেছিলাম।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমি বলি, যে দেশটা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয় আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোঁদন করছেন, উঠ-বস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলি আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অ্যারাবিক স্প্রিং, ডেমোক্রেসি এসব কথা বলে বলে যে সমস্ত ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে এখন নিজেরাই নিজের প্রতি একটা প্যাঁচে পড়ে গেছে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আজ সারা বিশ্বই অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে গেছে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। গণতন্ত্র নিয়ে যারা আমাদের এত জ্ঞান দিচ্ছে, কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থাটা কী। কয়েক দিন আগের কথা, টেনিসিস রাজ্যে তিনজন কংগ্রেস সদস্য, একজন উইম্যান; একজন হচ্ছেন জাস্টিস জোন, জাস্টিস পিয়ারসন আরেকজন হচ্ছেন গ্লোরিয়া জনসন—এই তিনজন। আমেরিকায় আপনারা জানেন যে, প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায় অস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে যাচ্ছে, বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করছে, শিক্ষকদের হত্যা করছে, শপিংমলে ঢুকে হত্যা করছে, ক্লাবে যাচ্ছে সেখানে হত্যা করছে। এটা তো প্রতিদিনের ব্যাপার, কোনো না কোনো রাজ্যে অনবরত ঘটনা ঘটছে। এই তিনজনের অপরাধ হলো, তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য আবেদন করেছিলেন, এইভাবে যার তার হাতে অস্ত্র থাকা এবং এইভাবে গুলি করে শিশু হত্যা বন্ধ করতে হবে। এটা ছিল তাদের অপরাধ আর এই অপরাধে জাস্টিস জোন এবং জাস্টিস পিয়ারসনকে তাদের কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। একজন সাদা চামড়া ছিল বলে বেঁচে যায়। যেহেতু এই দুজন কালো চামড়া, তাদের অপরাধ হলো তারা কালো চামড়া। সেই জন্যই তাদের সিট আন সিট হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদকে ফেরত না দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইখানে মানবাধিকার কোথায়, এখানে গণতন্ত্র কোথায় এটা আমার প্রশ্ন। এমনকি বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে সেই খুনি রাশেদ আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। প্রতিটি সরকার, যত প্রেসিডেন্ট আসে সবার আছে আমি আবদেন করেছি, আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি, ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রী হত্যাকারী, এরা মানবতা লঙ্ঘনকারী এদের আপনারা আশ্রয় দিয়েন না, ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না, এই খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে আর এখন দেখা যায়, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তাদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে, যার গণতান্ত্রিক কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। অগণতান্ত্রিক ধারা এবং সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, তারা সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাবেদারি করে, পদলেহন করে।