সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের মিরেরচর ইয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসার নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্য বিনামূল্যে বিতরণের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের একটি দুষ্টুচক্র প্রায় এক থেকে দেড়লাখ টাকা মূল্যের এই পাঠ্যপুস্তকগুলো সরকারের রাজস্ব কোষাগারে জমা না দিয়ে কিংবা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে প্রতিষ্ঠানের সুপার জমির উদ্দিন মাসুক,শিক্ষক জহিরুল ইসলাম এবং আরো দু'জন শিক্ষকের সম্পৃক্ততায় পাঠ্যপুস্তকগুলো মাদ্রাসার পাশে মঙ্গলকাটার বাজার হতে একটি পিকঅ্যাপ ভ্যান গাড়িতে করে পাচার অথবা অন্যত্র বিক্রির উদ্দেশ্য পার্শ্ববর্তী সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ারঘাট বাজারে নিয়ে আসার পর সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাজারের একটি ঘরের মধ্যে ভ্যান গাড়িসহ পুস্তকগুলো রাখা হয়।
শনিবার (১৭ই ফেব্রুয়ারী) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় প্রতিষ্ঠানের একটি অসাধুচক্র একটি পিকআপ ভ্যান গাড়ি ভর্তি পুস্তকগুলো জাহাঙ্গীরনগর ইউপির মঙ্গলকাটা গ্রামের ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শাহ আলমের নিকট বিক্রি করেন। এই অসাধু ব্যবসায়ী শাহ আলম পার্শ্ববর্তী সুরমা ইউপির বালিকান্দি গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে পিকআপ ভ্যানের চালক বাবুল মিয়ার ভ্যান গাড়িতে করে পুস্তকগুলো মঙ্গলকাটা বাজার হতে হালুয়ারঘাট বাজারে নিয়ে আসেন এবং আজ রবিবার সকালে পিকআপ ভ্যান গাড়ি দিয়ে আরো একটি টিপে পুস্তক আনার কথা ছিল। এমন খবরের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হলে এই ভ্যানের চালক বাবুল মিয়া সুরমা ইউপির ভাতেরটেক গ্রামের প্রবাসী আক্তার হোসেনের দোকান ঘরের কেয়ারটেকার তার গাড়ি বোঝাই পুস্তকগুলো এই দোকানঘরের ভেতরে মজুদ করে ঘরে বাহিরে থালা ঝুলিয়ে দেন। একটু পরেই এই চালক সম্পূর্ণ পুস্তকগুলো এই দোকানঘরে গাড়ি থেকে পুস্তকগুলো আনলোড করে ভ্যানগাড়ি নিয়ে ছটকে পড়েন। খবর পেয়ে স্থানীয় উৎসুক জনতা এই দোকানঘরটির সামনে এসে ভিড় জমান। এ সময় সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত ওয়ালি আশরাফের নেতৃত্বে এস আই আনোয়ার,এস আই তোরণ,এস আই রিয়াজসহ পুলিশের একটি দল ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডিস্টিক কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার জামান খান ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে ভ্যান গাড়ি ভর্তি পাচার করার উদ্দেশ্যে বিপুল সংখ্যক পুস্তক দেখতে পান এবং তা জব্দ করেন।
এ ব্যাপারে পিকআপ ভ্যানের চালক বাবুল মিয়া জানান,আমাকে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শাহ আলম তার এই খরিদকৃত পুস্তকগুলো আমার ভ্যানে করে ভাড়ায় হালুয়ারঘাট বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। তাই তিনি তার ভ্যান গড়িতে করে পুস্তকগুলো মঙ্গলকাটা বাজার থেকে হালুয়ারঘাট বাজারে নিয়ে আসেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে খরিদকৃত পুস্তকগুলোর মালিক ব্যবসায়ী ভাঙ্গারী শাহ আলম জানান,তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সুপার,এবং শিক্ষক জহিরুল ইসলামসহ আরো দুজন শিক্ষকের নিকট হতে ২৯ হাজার ২২৫ টাকায় এই পুস্তকগুলো খরিদ করেন। সরকারী এসব পুস্তকগুলো গোপনে খরিদ করার কোন এখতিয়ার আপনার আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে মিরেরচর ইয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসার আজীবন দাতা সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন রাতে বিপুল পরিমান বই পাচারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান আজ সকালে ও আরো একটি পিকআপ ভ্যান গাড়িতে করে আরো বই পাচারের কথা ছিল। এই বই পাচারের সাথে প্রতিষ্ঠানের সুপার জমির উদ্দিন মাসুক সরাসরি জড়িত এবং এই পাচারের ঘটনার সাথে জড়িত সকালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মিরেরচর ইয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জমির উদ্দিন মাসুক তার প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত প্রচুর পরিমান পুস্তক পাচারের বিষয়টি জানতে চাইলে এর সাথে তিনি সম্পৃত্ততা নেই জানিয়ে বলেন ঘটনার সময় তিনি প্রতিষ্ঠানে ছিলেন না।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডিস্টিক কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার জাহান খান এক গাড়ি ভর্তি পুস্তক অন্যত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে এই দাখিল মাদ্রাসা হতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করাসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত ওয়ালি আশরাফ পুস্তক পাচারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি তদন্ত চলছে শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকারের দেয়া বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণের পর অতিরিক্ত পুস্তক থাকলে ঐ প্রতিষ্ঠান পুস্তকগুলো জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমাদান করবেন। কিন্তু কেউ পুস্তকগুলো অন্যত্র বিক্রি করা আইতগত দন্ডনীয় অপরাধ। যারাই এই বই পাচারের সাথে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে থানায় এহাজার দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মিরেরচর ইয়াকুবিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রচুর পুস্তক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬/৭ শত জন শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকারের দেয়া বিনামূল্যে বই বিতরণের পর অবশিষ্ট বইগুলো আামদের শিক্ষা অফিসে জমা না দিয়ে কেউ বইগুলো পাচারের উদ্দেশ্যে অথবা বিক্রি করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে নীতিমালা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান তিনি।