সিলেট শহরতলির মেজরটিলা মোহাম্মদপুরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান সেলিম আহমদ। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল আল হারামাইন হাসপাতালের ৭ম তলার করিডোরে। হুইল চেয়ারে করে নিচে নামানো হচ্ছে। আমাকে দেখেই দুই হাত উপরের দিকে উঠিয়ে দিলেন। বললেন দোয়া করার জন্যে। আর কোনো কথা হয়নি।
৮ অক্টোবর সকালে জানতে পারি সেলিম ভাই আর নেই। মহান সৃষ্টিকর্তার ডাকে সারা দিয়ে ৭ অক্টোবর দিনগত রাত দেড়টায় পারি জমিয়েছেন ওপারে। এই চলে যাওয়াটাই সত্য।
সেলিম আহমদ সেলিম ভাই নানান কারণে সিলেটের সর্বমহলে সুপরিচিত। বিএনপির রাজনীতি করেছেন। জেলা কমিটির সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এই কারণে রাজনৈতিক আড্ডা বা কর্মসূচিতে পাওয়া যেত সেলিম ভাইকে। তিনি ছিলেন বিদ্যানুরাগী। মেজরটিলার হযরত শাহজালাল (রহ.) হাইস্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা কর্মসূচিতেও পাওয়া যেত সেলিম ভাইকে।
তিনি একজন সালিশ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সালিশে জটিল সমস্যার সমাধানে বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারতে তিনি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন সহযোগিতার হাত নিয়ে। নির্যাতিত মানুষ সেলিম ভাইয়ের দ্বারস্ত হলে ন্যায্য বিচার পেতেন। এ জন্য সামাজিকভাবে তিনি ছিলেন গ্রহণযোগ্য এক ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সেলিম ভাইয়ের উপস্থিতি থাকত প্রাণবন্ত। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। এ জন্য বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সেলিম ভাইয়ের সম্পৃক্ততা ছিল। ধর্মীয় রীতি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছিলেন আন্তরিকভাবে।
৮ অক্টোবর এই সেলিম ভাইয়ের মরদেহ দেখেছি কফিনবন্ধি। যেন তিনি ঘুমিয়ে আছেন। সিলেট নগরীসহ আশপাশ এলাকা থেকে অনেকে এসেছেন শেষবারের মতো সেলিম ভাইকে দেখার জন্যে। বিকেল চারটায় নিজ বাড়ি থেকে কফিনবন্ধি হয়ে শেষ বিদায় নেন সেলিম ভাই। মোহাম্মদপুর মাদ্রাসায় আসর নামাজের পর প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এই জানায় অংশ নিয়েছিলেন হাজার হাজার মুসল্লি। সিলেটের আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছিলেন জানাজায়। জানাজার পূর্বে সেলিম আহমদের ছোট ভাই জাহাঙ্গির আলমের এক মিনিটের বক্তব্য কাঁিদয়েছে শতশত মুসল্লিকে।
শেষ জানাজা সম্পন্ন হয় হযরত শাহপরাণ (রহ.) মসজিদে। জানাজা শেষে দাফন করা হয় হযরত শাহপরাণ (রহ.) কবরস্থানে। বিদায় শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় সেলিম ভাই। ভালো থাকবেন ওপারে। আপনার সেজদা যেন মহান সৃষ্টিকর্তা কবুল করে নেন-এই প্রার্থনা করছি দু‘হাত তুলে।