ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‘সিদ্ধান্তহীনতায়’ ধসের ঝুঁকিতে বায়েজিদ লিংকরোডের ১৬ পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩০ জুন ২০২২ ০৮:৪৭:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বর্ষা মৌসুমে চরম ঝুঁকিতে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংকরোডে থাকা ১৬ পাহাড়। ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাটা পাহাড়গুলোর মাটি বৃষ্টিতে অল্প অল্প করে ধসে পড়ছে। গত বছর এপ্রিলে ধসের কারণে একপাশের সড়ক বন্ধ ছিল প্রায় চার মাস। এরপরও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি দায়িত্বরত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

জানা যায়, কখনো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, কখনো পরিবেশ অধিদপ্তর, আবার কখনো পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর অফিসে চিঠি চালাচালি করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রায় আড়াই বছর ধরে এ চিঠি চালাচালি চললেও ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাটা পাহাড়গুলো নিয়ে কোনো সমাধান হচ্ছে না। বরং এগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

সিডিএ’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পাহাড়গুলোকে নতুন করে ৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে কাটার পরামর্শ দিলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ধসের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলো নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে সবশেষ বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে ১৩ সদস্যের কমিটি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন করতে মূল শহরের প্রবেশদ্বারের সঙ্গে সংযুক্ত করে বাইপাস সড়ক করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট টোল রোডের মুখ থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময়ের ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রকল্পটি শেষ হয় ৩২০ কোটি টাকায়।

চট্টগ্রাম বাইপাস সড়ক নামে ওই প্রকল্পের জন্য ৯২০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১২ মে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পটির জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়। প্রকল্পের আওতায় একটি রেলওয়ে ওভারব্রিজসহ ছয়টি ব্রিজ এবং কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের ৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়।

কিন্তু বেপরোয়াভাবে পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে ২০২০ সালের শুরুতে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিদর্শনে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, একেবারে নতুন রাস্তাটি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে

আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নেওয়া হলেও সিডিএ ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কেটেছে। এ নিয়ে সিডিএকে নোটিশ দিয়ে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি শুনানিতে তলব করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

শুনানিতে অনুমোদনের চেয়ে প্রায় সাত লাখ ঘনফুট বেশি পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ও ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। শুনানি শেষে সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) রুবিনা ফেরদৌসী।

এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নকশা না মেনে পাহাড় কাটার অভিযোগ তোলেন সিডিএ’র বিরুদ্ধে। পরে জরিমানার বিষয়টি নিয়ে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে আপিল করে সিডিএ।

বিষয়টি এখনো অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। একইভাবে পরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আরেক শুনানিতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকেও ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। জরিমানার দুই মামলা আপিল শুনানিতে এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানা যায়।