ঢাকা, রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ই আশ্বিন ১৪৩১

উপকূলের নারী আমিরুননেছা ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে চায়

রনজিৎ বর্মন, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৭:০০ অপরাহ্ন | খুলনা

 সাহসী মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি নারীকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। তেমনই এক কঠোর পরিশ্রমী নারী আমিরননেছা। নিজের ইচ্ছাশক্তি কে কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন করে রীতিমত তাক লাগিয়েছেন পুরো এলাকা জুড়ে। সাতক্ষীরার উপকুলীয় শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পার্শ্বে খালি গ্রামের শাহিন ইসলামের স্ত্রী আমিরননেছা। 

বিয়ের পরে হতদরিদ্র স্বামীর পরিবারের সংসারের হাল ধরতে হয় আমিরননেছাকে। স্বামীর একার আয়ে সংসারের সকল খরচ সংকুলান হয়না। যে কারণে শ্বশুর বাড়ি আসার পর থেকে শুরু হয় আমিরুনের দৈনন্দিন মজুরি দেওয়া সহ বাইরের নানাবিধ কাজ। কখনো ঘেরের লোনা পানিতে সারাদিন কাজ করা, কখনো পুরুষ মানুষের সাথে পুকুরের মাটির কাজ করা, কখনো ঘেরের শামুক বেছে দেওয়া। এভাবে বিভিন্ন ধরনের দৈনন্দিন মজুরির কাজ করে সংসারের স্বামীর আয়ের সাথে পারিবারিক আয় বাড়াতে থাকেন তিনি।

পরপর দুইটি পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ায় তাদের ৪ জনের সংসারের খরচ যোগানো খুব কস্ট হয়ে যাচ্ছিলো দুজনের। স্বামী সুন্দরবনের মাছ কাঁকড়া আহরণ করে আয় বাড়ালেও তাতে সংকুলান হচ্ছিলনা এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অসুখের সম্মুখিন হতে হয় তাদের। আমিরননেছা মনে মনে কোন ছোট খাটো কাজ খুঁজছিলেন। কোন এক সময় তিনি দর্জির কাজ শিখেছিলেন কিন্তু সেলাই মেশিন ও অন্যান্য উপকরণের অভাবে কাজ করার সুযোগ হয়নি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বারসিকের পরিবেশ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তিনি উক্ত প্রকল্পের সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি আয়বর্ধন কর্মকান্ড হিসেবে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু বিভিন্ন রকমের সিট কাপড়ের সহায়তা পান। এর পর স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে আমিরননেছা কাজ শুরু করেন। 

বাড়ীর আশে পাশের প্রতিবেশী ও পরিচিত জনদের সাথে নিজের দর্জি কাজের কথা বলতে থাকেন এবং দিনদিন তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। নিজের এলাকার প্রতিবেশিদের ছোটখাট অর্ডার আসতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কাজের পরিধি। এখন আর দিন মজুরী দেওয়া লাগেনা। আমিরননেছা এ বিষয়ে বলেন, “স্বামীর একার আয়ে বর্তমান সময়েটিকে থাকা কষ্টকর, তাই সংসারের আয় বাড়ানোর জন্য সেলাই মেশিন এর কাজ ও সিট কাপড়ের ব্যবসা করে আয় করছি। বারসিক থেকে সেলাই মেশিন ও সিট কাপড়ের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সহযোগিতা নিয়ে ব্যবসাটাকে ভালো ভাবে চালু করতে পারছি। লাভের টাকা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মিটিয়ে নিয়মিত সঞ্চয় জমা করি।”সপ্তাহ বা ১৫ দিন পর পর সীট কাপড় বিক্রির টাকা একত্রিত করে পুনরায় মালামাল কিনে এনে ব্যবসাকে সমৃদ্ধি করে চলেছেন তিনি। 

 

এলাকার অধিকাংশ নারী ও শিশুদের পোশাক তৈরির জন্য প্রচুর পরিমানে অর্ডার আসে প্রতিদিন। যে কারণে তিনি একার পক্ষে সব কাজ সম্পন্ন করতে পারেননা। সে কারণে তার সেলাই কাজে সহযোগিতা করার জন্য আলাদাভাবে দুই জন কর্মী নিযুক্ত করেছেন। আমিরননেছার কাজের বিস্তৃতির আরো একটি মূল কারণ হল তার কাছে নানা ধরনের সীট কাপড় রয়েছে। বাজারের দামেই সীট কাপড় পাওয়া যায় সেজন্য লোকজন তার কাছ থেকে সীট কাপড় ক্রয় করেন। তাছাড়া তার হাতের কাজের কোয়ালিটি খুব ভালো এবং নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরী করতে পারায় সর্বদা কাজের ভিড় লেগে থাকে।

 

নিজের বাড়ীতেই সীট কাপড় এর দোকান ও সেলাই মেশিন এর কাজ করে সম্মৃতি পেয়েছেন আমিরননেছা। তিনি এলাকার আরো ৩/৪ জন নারীকে কাজের সুযোগ করতে পেরেছেন। এলকার ২/৩ তিন জন নারী প্রতিদিন এখানে এসে কাজ করেন। প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন বলে তিনি জানান। লাভের টাকা দিয়ে তিনি একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান কিনেছেন। বর্তমানে তার দোকানে প্রায় ২৫ হাজার টাকার সীট কাপড় রয়েছে। তিনি এখন স্বপ্ন দেখছেন ছোট ছেলেকে লেখাপড়া শিখানোর পাশাপাশি তার স্বামীকে একটি ইঞ্জিন চালিত ভ্যান কিনে দেবেন। পরে নিজের দোকান ও বসত ঘর টাকে পাকা করবেন।

 

আর্থিকভাবে সাবলম্বী আমিরননেছা এলাকার একজন উদ্যোগী নারী হিসেবে সুপরিচিত। তার সফলতার গল্প নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে। যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।




সবচেয়ে জনপ্রিয়