নিয়ম না মেনেই অনিয়ম আর দুর্নীতির পথেই যেন হাঁটছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অনিয়মের ভারে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেন ভুগছে স্বাস্থ্যহীনতায়। লুটপাটে নেমেছে সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে গভীর নলকূপ প্রকল্প চলমান কাজে উঠেছে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ। নলকূপ নিতে অফিসে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকাও। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারন মানুষ।
জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায়ও কমিউনিটি বেইজ নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ( পি এস ডব্লিউ এস ই) অধীনে নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অচ্ছল ও দরিদ্র পরিবারের জন্য ১৩০টি অগভীর নলকূপ বরাদ্দ দেয়া হয়।
অগভীর নলকূপ স্থাপন কাজের শুরু থেকেই নলকূপ স্থাপন, প্যাটফরম তৈরি, পানির লাইন সংযোগে নেয়া হয় অনিয়মের আশ্রয়।
ব্যবহার করা হয় নিম্নমানের ইট, খোয়া, দেয়া হয় সিমেন্টের ভাগ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেককম। সচ্ছল পরিবার ছাড়াও একই পরিবারের দেয়া হয় একাধিক সংযোগ। বোরিংয়েও নেয়া হয় অনিয়মের আশ্রয়।
ফলে কাঙ্খিত সুবিধা পাচ্ছেন না মানুষজন, যা কিছু হয়েছে, তাতে সুবিধা পাচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার। এমনকি নলকূপ নিতে গুনতে হয়েছে অর্থ, অফিসের দিতে হয়েছে টাকা।
প্রতিটি নলকূপ স্থাপনের জন্য প্রায় ২৫০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া থাকলেও ২৫৫০ টাকার সাথে অনলাইন ফি ও ফরম ফিলআপ ফির কথা বলে অতিরিক্ত ১০০-১৫০ টাকা আদায় করে সুবিধাভোগীর থেকে লোপাট করা হয়েছে এসব টাকা। বাকি টাকা গেছে ঠিকাদার, কর্মকর্তাসহ দুর্নীতিবাজদের পকেটে। সুবিধাভোগী পরিবার বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও নিম্নমানের কাজের কারণে তাদের সুবিধা প্রতিষ্ঠা হয়নি। পরিবহন ব্যয় বাবদ অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কোন গ্রাহক জানেন না যে পরিবহন ব্যয় বাবদ তারা টাকা পাবে কিন্তু সেই টাকা কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
তারা দাবি করছেন তাদের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে, কোন গ্রাহক এই বিষয়ে জানতে চাইলে তারা ফরম ও অন্যান্য খরচ বাবদ জিম্মি করে প্রতিটি গ্রাহক থেকে এই টাকা তুলে নিয়েছেন। এদিকে গ্রাহকদের ভাড়া বাবদ গুনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
ভাই ভাই ট্রেডার্স এর ম্যানেজার বায়জিদ হোসেন কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্যের কর্মকর্তা ৬০ টি ইট,২ বস্তা বালি ও ১ ব্যাগ সিমেন্ট গ্রাহকদের দেন।কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এই ভাবে কাজ হলে একটু দুর্বল হবে কাজ।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যতগুলো গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয় তারা একই কথা বলেন , তারা হলেন উপজেলার বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের তারাকুল গ্রামের আঃ নুর, জামুহালী গ্রামের জাফের ,ছোটতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম এবং তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নের দাসরা মালিপাড়া গ্রামের আঃ আলিম। গ্রাহকগণ জানেন না যে তাদের সাথে প্রতারণা করছেন গণস্বাস্থ্যের কর্মকর্তা , তাদের বরাদ্দ থেকে কম পরিমাণ মালামাল দিয়ে নিজের পকেট ভরাচ্ছেন ।
এই ব্যপারে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক রাজমিস্ত্রি বলেন, আমাদের করার কি আছে ঠিকাদার যা দেন আমাদের তাই দিয়ে কাজ করতে হয়। আর এদিকে অফিস থেকে ৪-৫ সেপ্টি খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে ছোট কড়াই দিয়ে ৪-৫ কড়া মেপে দিয়েছেন যা দেখে চোখ ছানাবড়া। যেখানে ১ সেপ্টি খোয়া সমান প্রায় ৪ কড়া খোয়া। এদিক থেকেও ঠকানো হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে সাংবাদিকদের এসব বিষয় জেনে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উপ-সহকারী প্রকৌশলী উপজেলার মাহমুদ পুর, আলমপুর, তুরসীগঙ্গা ও বরাইল ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ৬০ টির স্থানে ৬৬-৭০ টি ইট ১ ব্যাগ সিমেন্টের স্থানে ১.৫ ব্যাগ সিমেন্ট, ৩-৪ বস্তা বালি( যেখানে ২ বস্তা দেওয়া হতো) ও যাতায়াত বাবদ টাকা দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে গ্রাহকের থেকে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শামীম হোসেন কে এই বিষয়ে জানানো হলে তিনি বলেন, গ্রাহকদের যা দরকার আমরা তাই দিচ্ছি। সমস্থ দায়ভার কর্মকর্তাদের দিয়ে সেপ্টি দিয়ে না মেপে কড়াই দিয়ে মেপে দেওয়ার ব্যাপারে বলেন, নিম্নমানের কাজের বিষয়টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে, টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, সুবিধাভোগীদের সুবিধার জন্য যথাযথ ফি নিয়ে অফিসের স্টাফের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেয়া হয়, যদিও এটি নিয়মের মধ্যে পড়ে না। অতিরিক্ত ফি আদায় হয়েছে কিনা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।