সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলের উপর আরোপিত বহিস্কারাদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। রাবেলের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এ আদেশের পর সোমবার বিকেলে সন্তোষ প্রকাশ করে আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেন, বহিস্কারাদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। তবে নির্দেশনার কপিটি এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি।
রাবেল জানান, হাইকোর্টের ২৭নং কোর্টের বিচাপতি মো. খছরুরজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদুল হাসান তালুকদারের ডিবিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর মেয়র পদের উপর আরোপিত স্থগিতাদেশ ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন। এর প্রেক্ষিতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে বহাল থাকতে রাবেলের আর কোনো আইনি বাধা নেই।
রাবেলের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার চৌধুরী মোর্শেদ কামাল টিপু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট খান উজ্জল ও অ্যাডভোকেট শাহ নাবিলা কাশফি।
উল্লেখ্য, নভেম্বরের শেষদিকে লন্ডনে সফর করেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল। সফরকালে তিনি লন্ডনে গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন। বক্তব্যকালে রাবেল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ সচিবদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন।
লন্ডনে দেয়া ওই বক্তব্যে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে মেয়র রাবেল বলেছিলেন- ‘গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আমি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আমি সাজিয়েছি। লাইটিং করেছি। আরিফ ভাই যেভাবে টাউনকে উন্নত করেছেন আমি সেইভাবে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন করেছি। আমরা প্রবাসী থাকায় বাংলাদেশের মতো মনমানসিকতা নয়। এ কারণে কাজ করতে পেরেছি।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে চ্যালেঞ্জের বিষয়ে রাবেল অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেছিলাম আমি একজন প্রবাসী নির্বাচন করবো। কিন্তু তিনি দেননি। ‘প্রবাসে যাও’- বলে দিয়েছিলেন। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করে উনাকে বলেছিলাম, আপনারা যে প্রার্থীই দেন আমি পাস করবো। আপনার বাংলাদেশি প্রার্থী পাস করতে পারবে না। এরপর তিনি আমাকে মনোনয়ন দেননি। আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো টিক হয়নি।’
দেশের উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু দুর্নীতি কমছে না এমন বক্তব্যে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন- ‘দেশ খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও উন্নত হোক- এটা আমরা আশা করি। একজন ভালো মানুষ গোটা দেশকে ভালো করবে সেটি সম্ভব নয়। দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, আমরা তো গিয়ে ফান্ডিং আনি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টেজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তব দিক। একটি বরাদ্দ তিনি ৫ পার্সেন্ট টাকা দিয়ে আনতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।’
তার ওই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। তার এই বক্তব্যের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে ৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- এ ধরনের জনহানিকর বক্তব্য স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২ এর (খ) ও (ঘ) অনুযায়ী মেয়র পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ। এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি করা হয়েছে এবং তা দ্রুত কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়; ‘আমিনুল ইসলাম রাবেল ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের বিরুদ্ধে হানিকর ও রাষ্ট্রের জন্য হানিকর বক্তব্য প্রদান করেছেন। হানিকর বক্তব্য প্রদান করায় এহেন অপরাধমূলক কার্যক্রম পৌর পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বলে সরকার মনে করে। এ কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল গত পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে জয়লাভ করেছিলেন। এ সময় তিনি ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। দলের সিদ্বান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ার কারণে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। তবে তাঁর আপিলের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সেই বহিস্কারাদেশ ৬ মাসের জন্য বাতিল করেন হাইকোর্ট।