গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চারদিকে পানি আর পানি। বাসা বাড়ীতে পানি উঠে যাওয়ায় মাথা গোঁজার ঠাইয়ের জন্য মানুয় আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটেও ঠাঁই মিলছে না আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে।
উপজেলার অধিকাংশ বাড়ীঘরে হাটুপানি কোমর পানি। রাস্তাঘাটে বুকপানি সাঁতার। নৌকা দিয়ে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে।
গত শনিবার সকাল থেকে জগন্নাথপুর পৌরএলাকাসহ উপজেলাজুড়ে পানি দ্রুত হুহু করে বেড়ে ভয়াবহ বন্যার রূপ নিয়েছে। স্মরণকালের ইতিহাসে এত ভয়াবহ বন্যা কেউ দেখেনি।
বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সকল প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সংযোগ।
সিলেটের বিভাগীয় শহরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়ক জগন্নাথপুর-সিলেট সড়ক, জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জসহ জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সড়কগুলি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে জগন্নাথপুর পৌরশহরের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র, জগন্নাথপুর বাজার, উপজেলা পরিষদ, এসিল্যান্ড অফিসসহ গুরুত্বর সেবাকেন্দ্র গুলি।এছাড়া গ্রামীন রাস্তা-ঘাট নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে বন্যার পানিতে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত জগন্নাথপুরের প্রায় ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিন কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্র কেন্দ্রগুলোতে ঠাঁই মিলছে না পানিবন্দি মানুষের।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ ভবনে শত শত মানুষ আশ্রয় নিলেও এখনও ত্রান সামগ্রী পায়নি। এখানে আশ্রিত সাংবাদিক আলী হোসেন জানান,৩ দিন ধরে শত শত পরিবার আশ্রয় নিলেও কোন ত্রাণসামগ্রী পায়নি। ইকড়ছই আলিয়া মাদ্রাসা, জগন্নথাপুর পৌরসভা ভবন, জগন্নাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যলায়সহ প্রতিটি কেন্দ্রে মানুষের উপচে পড়া ভীড়। এসব কেন্দ্রে ত্রাণের জন্য আহাজারি চলছে।
পৌরএলাকার সফিক মিয়া জানান, শনিবার ভোর থেকে পানি বাড়তে থাকে। দুপুরের দিকে পুরো জগন্নাথপুর নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। অনেক পরিবার স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদযালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে জগন্নাথপুরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে পড়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আবাসিক (বিদ্যুৎ) প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম জানান, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আঁকার ধারণ করায় সিলেটের বরইকান্দি বিদু্যতের সাবস্টেশন পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ওই সাবস্টেশন থেকে জগন্নাথপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুল ইসলাম বলেন, পানিবন্দি মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে সাধ্যমত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি।