গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভুত্থানে প্রথম শাহাদাত বরণ করেছিলেন যিনি সেই ওয়াসিম আকরামের নামে এই উড়াল সেতু। আমরা সারাদেশে যারা এই জুলাই অভুত্থানে শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতি চিহ্ন তৈরি করছি।
শুক্রবার সকাল ১০টায় এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে টোল আদায়ের কার্যক্রম উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আরো বলেন, যেন সারাদেশের মানুষ এবং আগামী প্রজন্ম তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে পারে। এই লক্ষ্যেই আজ আসা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ যে সংগ্রামে শামিল হয়েছেন, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের যেন পরবর্তী প্রজন্ম সবসময় স্মরণ করতে পারে সেজন্য আমরা আমাদের উদ্যোগ চালিয়ে যাব।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি এবং সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
একদিন আগে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম পাল্টে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম জুলাই-অগাস্টের ছাত্র জনতার অভুত্থানের ‘প্রথম শহীদ’ চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরামের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর প্রথম টোল দেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। তারপর সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিমও টোল দিয়ে পার হন।
২০২৪ সালের অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল শুরু করলেও এত দিন টোল আদায় করা হয়নি। অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নামকরণ করা হয়েছিল প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে। তখন নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ ফ্লাইওভার’।
নাম পরিবর্তনের পর এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নতুন নাম ‘শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়ক’। জুলাই-অগাস্টের ছাত্র জনতার অভুত্থ্যানের ‘প্রথম শহীদ’ চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম ছিলেন কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটর সাইকেল ও ট্রেইলার চলাচল নিষেধ। মোটর সাইকেল চলাচলের বিষয়টি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিডিএ প্রস্তাব করলেও অনুমোদন মেলেনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে।
টোল হার অনুসারে, পতেঙ্গা থেকে জিইসি পথে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অটো (তিন চাকা) ৩০ টাকা, প্রাইভেট কার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রেবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা ও কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা টোল দিয়ে চলাচল করতে হবে।
যেহেতু এখনো এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো র্যাম্প চালু হয়নি তাই একটি টোল হারই ধার্য করার কথা বলেছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, পতেঙ্গা প্রান্তে চারটি টোল প্লাজা স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই ওঠা-নামা করা সব গাড়ির টোল আদায় করা হবে। আপাতত সিডিএ টোল আদায় করবে। পরে টেন্ডারের মাধ্যমে আমরা অপারেটর নিয়োগ করব এ কাজের জন্য।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল তিন বছর।
পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
কাজ অসমাপ্ত রেখেই ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের কাজ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি, জমি অধিগ্রহণের জন্য অপেক্ষা, ট্রাফিক বিভাগের অনুমতি না পাওয়া, লালখান বাজার অংশের নকশা নিয়ে আপত্তি, কোভিডের সময় কাজে ধীরগতি, বিকল্প সড়ক চালু করতে দেরি এবং সর্বশেষ বন্দর সংলগ্ন এলাকায় নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেরি হয়। এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেকবিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি র্যাম্প বিভিন্ন কারণে আপাতত নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। বাকি র্যাম্পগুলোর কয়েকটি র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে