যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের নাম আরও একবার শিরোনামে এসেছে। এবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু তার লন্ডনের একটি নতুন ফ্ল্যাট। উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় অবস্থিত এই ফ্ল্যাটটি তার পরিবারকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন ব্যক্তি। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের পর সানডে টাইমস ও দ্য টেলিগ্রাফ এই বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সানডে টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বাংলাদেশি আইনজীবী মঈন গণি উত্তর লন্ডনের ফ্ল্যাটটি টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে হস্তান্তর করেন। এরপর এই ফ্ল্যাটটি ব্যবহার করতে শুরু করেন টিউলিপ। এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, ২০০৪ সালে কিংস ক্রস এলাকায় আরেকটি ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন টিউলিপ। ওই ফ্ল্যাটটি দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ডেভেলপার, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
ল্যান্ড রেজিস্ট্রি নথি থেকে জানা গেছে, ২০০১ সালে ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ডে ফ্ল্যাটটি কেনা হয়। অথচ একই এলাকায় একই সময়ের আরেকটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয় ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে। এতে ফ্ল্যাট কেনার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা টিউলিপ ও তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন। মঈন গণি, যিনি হাসিনার সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতেন, সেই সময় ফ্ল্যাটটি টিউলিপের বোনের নামে হস্তান্তর করেন। ফ্ল্যাটটি কেনার সময় আজমিনার বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর এবং তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন।
টিউলিপ সিদ্দিক এই ফ্ল্যাটটি নিজের বাসস্থান হিসেবে বিভিন্ন সরকারি নথিতে তালিকাভুক্ত করেছেন। ২০১২ সালে ওয়ার্কিং মেনস কলেজের পরিচালক হিসেবে যোগদানের সময় এই ফ্ল্যাটকে তিনি তার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেন। তার স্বামী ক্রিশ্চিয়ান পার্সিও ২০১৬ সাল পর্যন্ত একই ঠিকানা ব্যবহার করেন।
টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে ব্রিটিশ সরকারের ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি এবং সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজের মধ্যে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের দুর্নীতি মোকাবিলা করা অন্যতম। কিন্তু তার নিজের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় এমন বিতর্কিত লেনদেন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
টেলিগ্রাফ বলছে, শেখ হাসিনার পতনের পর টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ক্রমাগত চাপের মুখে রয়েছেন। সর্বশেষ এসব অভিযোগ তার অবস্থান আরও দুর্বল করবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এখনো টিউলিপের ওপর আস্থা রাখেন। তবে এই বিতর্ক তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি কিছুদিন হ্যাম্পস্টেডের ফ্ল্যাটে ছিলেন। তার মুখপাত্র দাবি করেছেন, "টিউলিপ সিদ্দিকের এই সম্পত্তি বা অন্য যেকোনো সম্পত্তির মালিকানার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সমর্থনের ধারণাটি ভুল।"
গত মাসে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন টিউলিপ সিদ্দিকের পরিবারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বায়ান্ন/এসএ/পিএইচ