ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

তিন মাস পর রবিবার থেকে সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে

রনজিৎ বর্মন, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৩১ অগাস্ট ২০২৪ ০৪:২১:০০ অপরাহ্ন | খুলনা
শ্যামনগরে জেলেরা সুন্দরবনে যাওয়ার প্রস্ততি হিসাবে নৌকা মেরামত করছে।

তিন মাস পর সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে। জুন, জুলাই, আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধজ্ঞা ছিল। বনজীবি ও পর্যটকরা রবিবার থেকে যথাযথ নিয়ম মেনে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।

 

সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা, বন্যপ্রাণি এবং নদী-খালে মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় সুন্দরবন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর রবিবার থেকে সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে বাওয়ালীরা ও ট্যুর অপারেটররা প্রস্ততি নিচ্ছেন সুন্দরবন প্রবেশে। বৈধ পাশ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ,কাঁকড়া ধরবেন এবং ট্যুর অপারেটরা পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রম করাবেন এ আশায় তাদের ব্যস্ততা বেড়ে চলেছে। এক প্রকার শেষ পর্যায়ে তাদের নৌকা মেরামত করা, জাল তৈরী বা প্রস্তত করা।

 

তিন মাস নদীতে নৌকা বসে থাকায় অনেকের নৌকা মেরামত করতে, আবার সুন্দরবনে মাছ ধরতে যেতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় করতে মহাজনের নিকট থেকে অথবা কোন সমিতি বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। বুড়িগোয়ালিনীর বাসিন্দা ট্রলার মালিক নুর ইসলাম এমনটাই বললেন।

 

দাতিনাখালী গ্রামের বনজীবি আবু কওছার বলেন দীর্ঘ ২০ বছর যাবত সুন্দরবনে মাছ,কাঁকড়া ধরার সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিন মাস বন্ধ থাকার পর রবিবার ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনে যাব সেপ্রস্ততি চলছে। তিনি বলেন ঋন নিয়ে জাল, নৌকা মেরামত করেছি। আশাকরছি মাছ ধরে বিক্রী করে সে টাকা পরিশোধ করতে পারব। তবে সবকিছু মাছ সংগ্রহের উপর নির্ভর করছে বলে জানান।

 

ট্রলার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন তিন মাস পর্যটক সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় এক রকম বসে থেকে সংসার চালাতে খুব কস্ট হয়েছে। তিনি অবশ্য বলেন এসময়ে কিছু ঋন নিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে পর্যটকদের ভ্রমনের মাধ্যমে তার ট্রলার ভাড়া উঠিয়ে ঋনের টাকা পরিশোধ করবেন। 

 

দাতিনাখালী গ্রামের মাছ,কাঁকড়া সংগ্রহকারী জাহাঙ্গীর সানা বলেন জাল, নৌকা প্রস্তত করছি, সুন্দরবনে মাছ ,কাঁকড়া ধরতে যাব বলে। অনুরুপ বলেন বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কামাল গাজী,আব্দুল হালিম। তারা বলেন এক রকম নতুন করে ট্রলার গুলি সাজিয়ে তুলছেন। রং করা, কাপড় টানানো,পাটাতন ঠিক করা সবকিছু যেন নতুন করে সাজানো। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ট্রলার বা নৌকার তলায় লবন পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে তারা জানান।

 

সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলেরা দাবী করে বলেন সুন্দরবনের জেলের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার বনবিভাগ থেকে অভয়ারাণ্য এলাকার পরিমান বাড়ছে। ফলে সুন্দরবনের স্বল্প জায়গায় বেশি জেলে মাছ ধরতে যেয়ে মাছের পরিমান কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই জেলেরা অভয়ারাণ্য এলাকা কিছুটা উন্মুক্ত করার কথা বলেন।

 

বনবিভাগ সাতক্ষীরারেঞ্জ সুত্রে প্রকাশ চারটি ষ্টেশনের আওতায় দুই হাজার আটশত বিএলসির অনুকুলে প্রায় আট হাজার জেলে সুন্দরবনে বিভিন্ন সময়ে প্রবেশ করবে। 

 

সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশন কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম বলেন সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা করা হয় তিন মাসের জন্য। সময় শেষ হতে যাচ্ছে। বনবিভাগ থেকে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাশ দেওয়া হবে মাছ ধরার ও পর্যটকদের জন্য। এ সময় পর্যটকরা ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।

 

বন বিভাগ সাতক্ষীরারেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন সুন্দরবন রক্ষায় সময়ের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাশ নিয়ে জেলেরা সহ পর্যটকরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন।




সবচেয়ে জনপ্রিয়